
বিশ্বের ১৯৪ দেশের প্রায় পাঁচ হাজার দুর্লভ কয়েন সংগ্রহে রয়েছে জাকির হোসেন নামের এক প্রকৌশলীর কাছে। ৩০০ বছরের পুরোনা কয়েনও রয়েছে তার সংগ্রহে। প্রাচীন এসব কয়েন দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করেন মানুষ। জাকির হোসেন নগরীর ষষ্ঠীতলা এলাকার মোঃ শাহজাহান খানের ছেলে।
জাকির হোসেন গত ৩৩ বছর ধরে সুলতান, মুঘল, ইস্ট ইন্ডিয়া, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া ছাড়াও আলেকজান্ডার দি গ্রেট, রোমান, মৌর্য ও সাসানিয়ান স¤্রাজ্যের স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহ করেছেন। প্রথমে বিদেশফেরত বাবার কাছ থেকে লিবিয়াসহ বেশ কিছু দেশের কয়েন পান। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে তার আগ্রহ। স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে শুরু হয় কয়েন সংগ্রহের মিশন।
আত্মীয়-স্বজন বা বিদেশে থাকা বন্ধুদের কাছ থেকে কয়েন সংগ্রহ করতেন। কারো কাছে দুর্লভ কয়েন রয়েছে এমন তথ্য পেলেই ছুটে যান দেশ-বিদেশে।
তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের একটি কক্ষে এসব কয়েন সাজিয়ে রেখেছেন তিনি। ৪৪টি কয়েন বুকে বিভিন্ন এসব সংগ্রহ করেছেন তিনি। এ কক্ষে বসে তিনি কয়েন নিয়ে গবেষণা করেন। প্রতিটি কয়েন একটি নির্দিষ্ট কাগজে মুড়ানো খাপে রাখা হয়েছে। খাপের গায়ে লেখা রয়েছে সাল। ওপরে লেখা রয়েছে দেশ বা এলাকার নাম।
তার সংগ্রহে রাজিয়া সুলতানা, দনুজ মর্দন দেব, ভিরা জ্যাডামরাহ (সমতট), হরিকেল, আলেক্সান্ডার ৩য়, সমুদ্রগুপ্ত, ধর্মাভিজায়া, এলগাবলুস, পস্তুমুস, ভারট্রাডামান, মাদনাভারমান, বারগোসাইন ২য়, দ্বিতীয় মাহমুদ, ইবনে আহমদ ইব্ন তুলুন, হয়সালা স¤্রাজ্য, দ্বিতীয় আকবর. হর্ষবর্ধণ (হর্ষ ), দ্বিতীয় খসরু, আলীবর্দী খান, স¤্রাট শাহজাহান, স¤্রাট হুমায়ুন, স¤্রাট আকবর ও টিপু সুলতান নামীয় কয়েন সংগ্রহে রয়েছে।
এ বিষয়ে জাকির হোসেন বলেন, তখন আমার বয়স ৬-৭ বছর। বাবা আমাকে লিবিয়ার কয়েকটি কয়েন দেন। কয়েনগুলো আমাদের দেশের থেকে আলাদা দেখে সংগ্রহের ইচ্ছে হয়। মাসে মাসে টিফিনের টাকা জমিয়ে কয়েন কিনতাম। দেশ-বিদেশ থেকে যখন বন্ধু-বান্ধব আসতো তখন তাদের কাছ থেকে কয়েন সংগ্রহ করতাম।
এরপর ব্রিটিশ কয়েন দেখে আমার আগ্রহ বেড়ে যায়। এগুলো নিয়ে পড়াশুনা শুরু করি। পড়ালেখার বাহিরে আমি কিছু কয়েন পেয়ে যাই। এরপর এগুলো নিয়ে লেখালেখিও শুরু করি। এগুলো দেখে মানুষ আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। বর্তমানে এটি আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান বিশ্বে ১৯৪টি দেশ রয়েছে। সবগুলোর দেশের অন্তত একটি হলেও কয়েন রয়েছে আমার কাছে। এছাড়াও ডেট কান্ট্রি মিলিয়ে ৪৬৫টি দেশের বা দীপের কয়েন রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার কয়েন আছে। আমি কিছু কিনেছি, কিছু সংগ্রহ করেছি। বন্ধুদের কাছে থেকেও নিয়েছি কিছু কয়েন।
তিনি আরও বলেন, সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সময় নকল কয়েনও পেয়েছি। প্রতিটি কয়েনের নিজস্ব ওয়েট প্যাটেন ইত্যাদি থাকে। এগুলো কোনটি কম হলে বুঝতে হবে এটি আসল নেই। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার কয়েন নিয়ে কোনো বাংলা বই নেই। আমার লক্ষ্য একটি বই লিখা ও নিজস্ব মিউজিয়ামের মাধ্যমে এগুলো সংরক্ষণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে প্রাচীন ইতিহাস তুলে ধরা।