১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শিরোনামঃ-




ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোলা স্থানে চিকিৎসা বর্জ্য ঝুঁকিতে জনজীবন

মোঃ আবু শহীদ, ফুলবাড়ী,দিনাজপুর করেসপন্ডেন্ট।

আপডেট টাইম : জানুয়ারি ১৮ ২০২৫, ২৩:২৪ | 642 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

হাসপাতালে রোগীরা আসেন রোগ থেকে রক্ষা পেতে অথচ কর্তৃপক্ষের গাফিলাতি ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ আর ছাড়াচ্ছে রোগ জীবাণু। এমন চিত্র দেখা মেলে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাস্টবিন থাকলেও তার পাশেই খোলা স্থানে ফেলা হচ্ছে চিকিৎসা বর্জ্য, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বর্জ্যগুলো কুকুর ও মুরগি ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ,মশা মাছি পড়ে ভনভন করছে। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষসহ রোগীরা। তথ্য সংগ্রের সময় স্থানীয়রা জানায়,মাদকসেবীরা অনেকে সেখান থেকে ইঞ্জেকশনের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ সংগ্রহ করে ব্যবহার করছে মাদক সেবনের কাজে।
হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় হাসপাতাল বর্জ্য বিধিমালা তৈরি করে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্দ্যেগ না থাকায় বিধিমালাটি বাস্তব রূপ পায়নি। হাসপাতালের বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে ব্যবহৃত সুই, সিরিঞ্জ, তুলা, অব্যবহৃত ঔষধ, রোগীদের রক্ত, গজ-ব্যান্ডেজ নেপকিনসহ নানা রকম চিকিৎসা বর্জ্য। সে বিধিমালায় হাসপাতালের বর্জ্য সংরক্ষণ এবং তা পুড়িয়ে নষ্ট করার কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলায় একটি সরকারী হাসপাতাল, ৪টি বেসরকারী ক্লিনিক এবং ১৩ টি প্যাথলজী রয়েছে। এর মধ্যে কারও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পত্র নেই। এছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের নবায়নকৃত লাইসেন্স নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নেই। তারা বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ না থাকায় তারা সঠিক সমাধান পাচ্ছেন না।
হাসাপাতালের বর্জ্য একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ করছে, অপরদিকে রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। মশামাছি পড়ছে ওইসব বর্জ্য,ে কোন কোন মাদক সেবনকারীরা বর্জ্য থেকে ফেলে দেয়া সিরিঞ্জ সংগ্রহ করে তা দিয়ে নেশা জাতীয় ইনঞ্জেকশন গ্রহণ করছে, যা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। মানবদেহ সুস্থ এবং স্বাভাবিক রাখতে হাসপাতাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ হাসপাতালের বর্জ্যই এখন অনেকের সর্বনাশের অন্যতম কারণ হতে চলেছে। হাসপাতাল থেকে সৃষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ এসব বর্জ্য যত্রতত্র ফেলায় হেপাটাইটিস বি, সি কিংবা এইডস সহ মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত। অথচ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়টি তেমন গুরুত্বই পাচ্ছে না।
আব্দুল মালেক নামে হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন জানান, হাসপাতালের ভেতর খোলা জায়গায় এভাবে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে । এতে করে পরিবেশ দুষন হচ্ছে, সেইসাথে নানা রকম রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে। অথচ কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই।
পৌর শহরের ওয়ান জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ম্যানেজার সবুজ কুমার মহন্ত বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তকে বারবার জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। তারা জানিয়েছে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য এখনও কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া সম্ভব হয়নি। অপাতত মাটিতে পুতে রাখা হয় এবং মাঝে মাঝে নদীতে ফেলা হয়। পৌরসভাকে বললেও এর কোন সুরাহা মেলেনি। ছাড় পত্রের আবেদন করলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিচ্ছেন না । এদিকে ছাড়পত্র ছাড়া বাৎসরিক লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছেনা। একই কথা বলেন ওয়ান থাউজেন্ড ডেইজ লাইফ হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এর ম্যানেজার ফারুক হোসেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, খোলা জায়গায় বর্জ্য পোড়ালে ধোয়ায় রোগীদের সমস্যা হতে পারে। বর্জ্য গুলো ইনসিনারেশন ব্যবস্থা না থাকায় ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছেনা। তাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে রাখা হয়। সপ্তাহে দুদিন পৌরসভার গাড়ি এসে সেগুলো নিয়ে যায়। ডাস্টবিনে না ফেলে খোলা স্থানে ফেলার ব্যপারে বলেন, আমাদের জনবল সংকট। ২ লক্ষ মানুষের জন্য একটি মাত্র সরকারি হাসপাতাল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। উপজেলার কোন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়নি। বার বার আবেদন করেও তারা ছাড়পত্র দিচ্ছেন না।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক মুহাম্মাদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, যত্রতত্র চিকিৎসা বর্জ্য ফেলা যাবেনা। নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এসব বর্জ্য সংরক্ষণ অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। নইলে সরাসরি ওই বর্জ্য নিয়ে এসে অন্য কোথাও ফেললে সেখানেও পরিবেশ দূষণ হবে এবং রোগ জীবাণু ছড়াবে। তাই পোড়ানোর পর অবশিষ্ট অংশটুকু পৌরসভা সংগ্রহ করে ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থানে ফেলবেন।
দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ ফেসদৌস জানান, চিকিৎসা বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলার কথা না। মূলত ইনসিনারেশনের মাধ্যমে করা উচিৎ। যেহেতু আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে ইন্সিনিয়ারেশনের ব্যবস্থাপনা নেই, সেহেতু লোকালি পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা থাকে। যদি ফুলবাড়ীতে এমন ব্যবস্থা না থাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি ক্লিনিক গুলো পৌরসভার সাথে সমন্বয় করে প্রিজম নামে একটি সংস্থা আছে তাদের সাথে মাসিক পরিশোধের ভিত্তিতে বর্জ্য ব্যবস্থা করে। আর আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে যেগুলো পুড়িয়ে ফেলার মত সেগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে, যেগুলো পোড়া যাবেনা সেগুলো মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। ফুলবাড়ী হাসপাতালে এ ব্যবস্থা কেন নেই এ বিষয়ে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলব।
দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক প্রভাতি রানী বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ গত ছাড়পত্রের বিষয়টি রংপুর বিভাগীয় অধিদপ্তরে প্রক্রিয়াধীন। এসব বর্জ্য আগে স্বপ্ন নামের একটি সংস্থা সংগ্রহ করত। এখন তাদের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নতুন করে চুক্তি হয়েছে কিনা এটি সহকারী পরিচালক স্যার বলতে পারবেন।
এবিষয়ে জানতে দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মলিন মিয়ার সরকারি মুঠোফোনে (০১৭৮৯-৩৭২২১৫) বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন কল গ্রহণ করেননি।

Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি- আলহাজ্ব আবদুল গফুর ভূঁইয়া,সাবেক সংসদ সদস্য, প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

 

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত।

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET