
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় অনুমোদন ছাড়াই মাছ চাষের জন্য ফসলি জমিতে ইচ্ছেমতো পুকুর খনন করা হচ্ছে। আর পুকুর খনন করার পর তোলা মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ক্রমেই কমছে চাষের জমি।
জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫ ইউনিয়নে সাড়ে ২২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি আছে। শ্রেণিভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছরই কোনো না কোনো ফসলের আবাদ হয়। উপজেলার মালঞ্চাপাড়া, ডুবাতেঘর, ডেরাহার, মুরাদপুর, ভূস্কুর, বাদলাশনসহ বিভিন্ন গ্রামে দিন দিন ফসলি জমির পরিমাণ কমছে আর বাড়ছে পুকুরের সংখ্যা। এই উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৪ হাজার ৬৪৮ টি পুকুর রয়েছে। এরপরও ঊর্বর ফসলি জমি কেটে আশঙ্কা জনকহারে পুকুর খনন করা হচ্ছে। ফসল উৎপাদন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ঝামেলাহীন অর্থ উপার্জনের চেষ্টায়ই ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে বলে স্থানীয় অনেক কৃষক জানিয়েছেন। একই সাথে চলছে জলাশয় দখল ও ভরাট। আর ড্রাম ট্রাকের মাটি আর ধুলার আস্তরণে বেহাল হচ্ছেন গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কগুলো। নানাভাবে স্থানীয় কিছু ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করে চলছে এসব পুকুর খনন কাজ। এ কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। একের পর এক খনন করা পুকুরে গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি।
মালঞ্চাপাড়ার গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান জানান, তার জমিতে ধান ভাল হয় না। এজন্য তিনি ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছেন। তার মতো অনেকে আবার পুকুর খনন করে ফসলি জমি মাটি দিয়ে উঁচু করে গাছের বাগান করছেন।
কৃষকরা জানান, উৎপাদনে যথেষ্ট শ্রম ব্যয় করেও কাঙ্খিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই লাভের আসায় পুকুর খনন করে তুলনামূলক ঝামেলাহীন অর্থ উপর্জনের চেষ্টা করছেন। এসব পুকুরে তারা নিজেরা মাছ চাষ করছেন, আবার কেউবা অর্থের বিনিময়ে মাছ চাষিদের কাছে লিজ দিচ্ছেন। এদিকে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে বর্ষা মৌসুমে পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বাড়ে জনদূর্ভোগ।
মাছ চাষি সেকেন্দার আলী জানান, এই শুকনো মৌসুমে পুকুর তৈরি করা অনেকটা সহজ। তাই এখন তারা পুকুর তৈরি করছেন মাছ চাষের জন্য। আগে পুকুর খনন করতে অনেক সময় লাগতো। কিন্তু এখন প্রযুক্তির ব্যবহারে ভেকু দিয়ে দ্রুত একটি পুকুর খনন করা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আদনান বাবু বলেন, প্রতিবছরই বাড়ছে পুকুরের পরিধি, কমে যাচ্ছে ঊর্বর আবাদি জমি। একই সঙ্গে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন এবং সরকারি জলাশয় দখল ও ভরাট করায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে শুনেছি। অবশ্যই অভিযান চালানো হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Please follow and like us: