
বগুড়ার বরেন্দ্রভূমি শিবগঞ্জ উপজেলায় শুরু হয়ে গেছে শীতের আমেজ। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের নেমে পড়েছেন এ এলাকার গাছিরা। উপজেলায় চলার পথে নজরে পড়ে গাছিদের কর্মব্যস্ততা। কেউ দড়ি বেঁধে দা কোমরে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতের কারুকাজে গাছের ছাল তোলা ও নলি বসাচ্ছেন। আবার কোথাও শুরু হয়েছে রস সংগ্রহের কাজ।
গাছিরা জানান, বছরের এই সময়টায় হাতে তেমন কোনো কাজ না থাকায় তারা খেজুরের রস আহরণ করেন। কিন্তু খেজুর গাছের পরিমাণ প্রতিনিয়ত কমায় এই পেশা হারিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র বলছে শিবগঞ্জে খেজুর রস সংগ্রহে প্রায় ১৫০ থেকে ১৭০ জন ব্যক্তি জড়িত রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সাধারণত বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ এই ৪ মাস খেজুরগাছ থেকে মিষ্টি রস সংগ্রহ করা হয়। তবে কোন কোন সময় শীত আগে আসলে রস সংগ্রহও শুরু হয় আগেভাগেই। শীত এলেই শহর থেকে অনেক মানুষ ছুটে যান গ্রামে, খেজুর রস খেতে। রস ছাড়াও গাছিরা এ সময় রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করেন। খেজুর রসের পাটালি গুড়ের পায়েশ না খেলে যেন শীতের আমেজই আসে না। শীতে রস সংগ্রহের এই চার মাস এলাকার অনেক গাছিই খেজুরের রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার প্রায় সব এলাকায় কমবেশি খেজুরের গাছ চোখে পড়লেও তুলনামুলকভাবে উপজেলার মাঝিহট্ট এলাকায় খেজুর গাছ বেশি চোখে দেখা যায়। ওই এলাকার খেজুর রস দিয়ে উপজেলায় চাহিদার ৮০ শতাংশ পূরণ হয়।
উপজেলার মাঝিহট্ট এলাকার গাছি আজাহার আলী জানান, প্রতি বছর শীত মৌসুমে তিনি ৪৫ থেকে ৫০ টি গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করেন। এক একটি গাছ থেকে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লিটার রস পাওয়া যায়। প্রতি লিটার রস ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা লিটার বিক্রি করেন তিনি। সূর্য উঠার আগেই তিনি গাছ থেকে ওই রস সংগ্রহ করেন। সকালের মধ্যেই তার সব রস বিক্রি হয়ে যায়।
তিনি জানান, কোন কোন দিন সব রস বিক্রি হয় না। অবিক্রিত রস জাল করে পাতলা ঝোলা গুড় তৈরি করেন। শীত মৌসুমে চার মাসে তিনি খেজুরের রস ও ঝোলা গুড় বিক্রি করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন।
গাছি আব্দুল ফকির জানান, আগে প্রচুর গাছ ছিল। ইটের ভাটা ও বিদেশি কাঠ বাগান তৈরি, নতুন করে গাছ না লাগানোয় খেজুর গাছের পরিমাণ কমছে। সঠিকভাবে এর পরিচর্যা না করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ ইত্যাদি নানা কারণে উপজেলার খেজুরগাছ বিলীন হতে চলেছে।
ওই এলাকার মাসুদ আলী, আলতাব আলী, ফয়েজ উদ্দিন, ভোলা মিয়া, বেল্লালের মতো অনেকেই মৌসুমি ব্যবসা হিসাবে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করেন এবং ওই রস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা জানান, বাপ-দাদারাও এক সময় খেজুরের রস সংগ্রহ করে বিক্রি করেছেন। এখন আমরা করছি। বাপ-দাদার পেশাটাকে এখনও ধরে রাখার চেষ্টা করছি। দিন পর দিন খেজুরের গাছ কমতে থাকায় শঙ্কিত তারা।
এলাকার গাছিদের দাবি, সরকারিভাবে নতুন করে খেজুর গাছ লাগানো প্রয়োজন।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার বলেন, বিভিন্ন সময়ে কৃষকদের খেজুরবীজ ও তালবীজ রোপণের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ গাছগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনীয়। এর রসও সুস্বাদু।