
তুষার আহমেদ.
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানাকে উপজেলা করার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারী) বিকেল ৩ টার দিকে সলঙ্গা থানার সদর মাদ্রাসা মোড় (শহীদ চত্বরের) সামনে ঘন্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করেন প্রায় শতাধিক মানুষ।
এসময় মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,
ঐতিহাসিক রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহ দিবস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও বরাবরই সলঙ্গা অবহেলিত হয়েই রয়েছে।
প্রায় ২৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জে গিয়ে প্রশাসনিকসহ নানা কার্যক্রম চালাতে হয়। এতে প্রতিনিয়ত জনগণকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা যা রক্তাক্ত ‘সলঙ্গা বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি ব্রিটিশ সরকারের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে সলঙ্গার হাটে বিলেতি পণ্য বর্জন আন্দোলনের কর্মীসহ সাড়ে চার হাজার সাধারণ মানুষ শহীদ হন।ব্রিটিশ শাসনামলে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনে জনতা উদ্বেলিত হয়ে বিলেতি পণ্য বর্জন করে স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। এমনি একটি আন্দোলনের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে সলঙ্গায়। সে সময় তৎকালীন
পাবনা জেলার (বর্তমান সিরাজগঞ্জে) সলঙ্গায় একটি ব্যবসায়িক জনপদ হিসেবে সপ্তাহে
দু’দিন হাট বসত। ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি ছিল বড় হাট। মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের কর্মীরা হাটে নামেন বিলেতি পণ্য কেনাবেচা বন্ধ করতে। আর এই স্বদেশি আন্দোলনের কর্মীদের রুখতে ছুটে আসেন
পাবনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আর এন দাস, জেলা পুলিশ সুপার ও সিরাজগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক এস কে সিনহাসহ ৪০ জন সশস্ত্র পুলিশ। সলঙ্গার গো হাটায় ছিল বিপ্লবী স্বদেশি কর্মীদের অফিস। পুলিশ কংগ্রেস অফিস ঘেরাও পূর্বক গ্রেফতার করে মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশকে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুক্ত করতে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিদ্রোহে ফেটে পড়ে সলঙ্গার সংগ্রামী জনতা। জনতার ঢল ও আক্রোশ দেখে ম্যাজিস্ট্রেট জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলি চালাতে নির্দেশ দেন। শুরু হয় বুলেট-বৃষ্টি। ৪০টি রাইফেলের মধ্যে মাত্র একটি থেকে কোনো গুলি বের হয়নি।এ রাইফেলটি ছিল একজন ব্রাহ্মণ পুলিশের। হত্যাকাণ্ডে হতাহতের সরকারি
সংখ্যা সাড়ে চার হাজার দেখানো হলেও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মতে এর সংখ্যা ১০ হাজারের অধিক। মাওলানা আবদুর রশিদ সলঙ্গা বিদ্রোহের মাধ্যমে উপনিবেশিক শাসনের ভিত নড়িয়ে
দিয়েছিলেন। সলঙ্গার রক্তসিক্ত বিদ্রোহ শুধু বাংলার মাটিকে সিক্ত করেনি, সিক্ত করেছে সমগ্র উপমহাদেশ। তারা বলেন, ২০০১ সালে সলঙ্গাকে থানায় রূপান্তর করে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সরকার। রায়গঞ্জ উপজেলার তিনটি এবং উল্লাপাড়ার তিনটি, মোট ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় এই থানা ( নলকা, ঘুড়কা, ধুবিল, হাটিকুমরুল সলঙ্গা ও রামকৃষ্ণপুর)। ছয়টি ইউনিয়নে জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। সলঙ্গা থানা ভৌগলকিভাবেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই থানার দুই দিক দিয়ে বয়ে চলেছে মহাসড়ক যেগুলো দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং খুলনা বিভাগের চার জেলার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। সলঙ্গা থানা সিরাজঞ্জের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সিরাজগঞ্জের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম সহ অনেক নেতা সলঙ্গাকে উপজেলা ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সর্বশেষ সদ্য বিদায়ী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও সিরাজগঞ্জে সফরে গিয়ে সলঙ্গাকে উপজেলা করার প্রতিশ্রুতি দেন। সর্বশেষ গত ২৬ জুন সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ সলঙ্গাকে উপজেলা করার দাবি জাতীয় সংসদের অধিবেশন উত্থাপন করেছেন। এর আগেও এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন মিলন ও সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম সলঙ্গা উপজেলা করার দাবি জাতীয় সংসদে তুলে ধরে ছিলেন। বক্তারা আরো জানান, সলঙ্গাকে উপজেলা না করা হলে মহা-সড়ক অবরোধ করার কথা জানান তারা।