
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ও পরিত্যাক্ত ভবন নিলাম ছাড়াই বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের যোগসাজশে কোন বিজ্ঞাপণ বা প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬টি টিনসেড ভবন,৬টি পাকা শ্রেণিকক্ষ ও ১টি টয়লেট এবং ১০টি খাড়া গাছ ও কিছু গাছের গুড়ি বিক্রি হয়েছে। সরকারি মূল্য,বিক্রয় মূল্য কিছুই প্রকাশ করা হয়নি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শহীদুল বারী খান ৮ অক্টোবর ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে তার কাছের লোকদের নামমাত্র মূল্যে অবৈধ ভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব ভবন ও গাছ বিক্রি করেছেন। অন্যদিকে নিলাম কিংবা টেন্ডার কোন কিছুরই নিয়ম না মেনে প্রায় দেড় লাখ টাকার সিডিউল বিক্রি করা হয়েছে। উন্মুক্ত নিলামের জন্য কীভাবে সিডিউল বিক্রি করতে পারেন এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তোর না দিয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে বলেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
এদিকে নামমাত্র মূল্যে এসব ভবন ক্রয় করে ওই দিনই কয়েকগুণ টাকায় বিক্রি করেন ক্রেতারা। সরকারি মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে নানা মহলে। সরকারি মূল্য কত তাও প্রকাশ করা হয়নি। গোপন সূত্রে জানা যায়, ১০টি গাছ ও কিছু গুড়ি সরকারি মূল্য ধরা হয়েছিল ৯৬ হাজার টাকা, তবে বিক্রি করা হয় ১লাখ ১০ হাজার টাকায়। ওই গাছ একই দিনে ২লাখ ৩৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে মূল ক্রেতা। এভাবে সরকারি ভবন নামমাত্র টাকায় নিলামে বিক্রি করায় সিন্ডিকেটকারীরা লাভবান হলেও সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সিন্ডিকেট করে ১৩৯টি শিডিউলের মধ্যে ৩ প্রতিষ্ঠানের নামে মাত্র ১০টি শিডিউল জমা দেয়। এতে তারা ইচ্ছামত দর প্রদান করেন। সরকারি মূল্যের সাথে নামমাত্র মূল্য যোগ করে তাদের নামে টেন্ডার বের করেন। পরে নিজেদের মধ্যে নেগোসিয়েশন করে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন ও গাছ বিক্রিতে হযবরল করে ফেলেছেন। তিনি সবাইকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছেন। এটা উন্মুক্ত নিলাম নাকি দরপত্র তা স্পষ্ট নয়। নিলামে সাধারণত ব্যবসায়ীদেরকে চিঠি দেয়া, মাইকিং করা, প্রচার প্রচারণা করা হয়। এখানে যেহেতু এসব করা হয়নি বরং প্রতিটি সিডিউল ১হাজার টাকা দরে বিক্রিও করা হয়েছে তাই এটাকে নিলাম বলা যাচ্ছে না। আবার, যেহেতু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিসহ পিপিআর নিয়ম মানা হয়নি কাজেই এটি দরপত্রও বলা যাবেনা। এটি মূলত ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে নির্দিষ্ট কাউকে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়া।
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. শহীদুল বারী খান এর দপ্তরে একাধিক বার গেলেও তিনি মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে আছেন বলে জানানো হয়। পরে বিকেল ৪টায় তার অফিসে গেলে তিনি তার কর্মচারীর মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে সাংবাদিককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। নিলামের বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে তিনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে বলেন; অন্যথায় কোন তথ্য দিবেন না বলে জানিয়ে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী জানান, বিষয়টি সম্পূর্ণ শিক্ষা অফিসের ব্যাপার। আমি সহযোগিতা করেছি মাত্র। নির্ধারিত মূল্য কত টাকা এবং কত টাকায় বিক্রয় হয়েছে বিস্তারিত তথ্য তারাই দিতে পারবে। প্রয়োজন হলে আগামী সোমবার অফিসে আসবেন বিস্তারিত জানাতে পারবো।