
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ২০০ বছরের বেশি সময়ের ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলায় ঘোড়া দেখার দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। এ মেলায় দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ঘোড়া নিয়ে এসেছেন ঘোড়া ব্যবসায়ীরা। মেলাকে কেন্দ্র করে পরসা সাজিয়ে বসেছে হরেক রকম মুখোরচক খাবারের দোকান, শিশুদের জন্য চরকি ও খেলনার দোকান। দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর ১ টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের মেলাবাড়ী এলাকায় এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এরপরই ঘোড়া বেচাকেনার জন্য (রশিদ) ছাপা বের হয়।
সরেজেমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘোড়া মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। গ্রামীন এ মেলায় পরসা সাজিয়ে বসেছে হরেক রকম মুখোরচক খাবারের দোকান,কসমেটিক্সের দোকান ও শিশুদের জন্য খেলনার দোকান। মেলায় আগতদের বিনোদনে জন্য দোলনা, নাগরদোলা, সার্কাস ও খেলাধূলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সব বয়সি নারী-পুরুষের ব্যাপক সমাগম ঘটছে। দর্শনার্থীদের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুনীদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ করা গেছে।
এদিকে ঘোড়া বিক্রি করতে আসা সাওয়ারীরা মেলায় সারিসারি করে ঘোড়া বেঁেধ রেখেছেন। তার পাশেই ছোট ছোট তাবু টাঙানো হয়েছে রাত্রী যাপনের জন্য। কেউ রান্না করছেন, কেউ আবার ঘোড়ার পরিচর্যা করছেন।
মেলা কমিটির সভাপতি শিক্ষক আফতাবুজ্জামান জানান, প্রতি বছর বাংলা বছরের বৈশাখ মাসের ১৩ তারিখ থেকে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের মেলাবাড়ী মাঠে এই ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা বসে।
রংপুরের তারাগঞ্জ থেকে ঘোড়া নিয়ে আসা জাহাঙ্গীর শাহ, জয়পুরহাটের ওহাব আলী, হাকিমপুর উপজেলার জাহের আলী, বিরামপুর উপজেলার ওসমান আলী এ মেলায় এসেছেন ঘোড়া বিক্রি করতে। তারা বলেন, একেক জন ছোট বড় মিলিয়ে ৪-৫ টি করে ঘোড়া নিয়ে মেলায় এসেছেন। তারা আকার ভেদে ঘোড়ার দাম রেখেছেন সর্বনি¤œ ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ২-১ হাজার টাকা কমবেশি হতে পারে। মেলায় এবার ঘোড়ার ক্রেতার অভাব রয়েছে, এজন্য বেচা বিক্রিও কম হচ্ছে।
আলাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মেলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দছিম উদ্দিন ম-ল বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলাটি ব্রিটিশ আমল থেকে হয়ে আসছে,তারা তাদের বাপ-দাদাদের কাছে শুনেছেন।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম খন্দকার মহিব্বুল বলেন, এটি এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ঘোড়া ব্যবসায়ীরা এসেছেন। মেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় পুলিশ সার্বক্ষনিক নজরদারি রাখছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী বলেন, সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত এই ঘোড়ার মেলায় কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে,সেদিকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক নজরদারি রয়েছে।