জ্ঞানী গুণী সবাই বলেন মুক্তি আসে মানবতায়, মানবতা বিনেরে- মন, ধর্ম-কর্ম বিফলে যায়।’ শাহ আবদুল করিম রচিত এ প্রতিপাদ্য নিয়ে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুইদিনব্যাপি শাহ অবদুল করিম লোক উৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছে। শাহ আবদুল করিম পরিষদ ও ধল গ্রামবাসীর আয়োজনে এবং সানোয়ারা গ্রুপ ড্রিংস এন্ড বেভারেজ ইন্ডা: লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় বাউল সম্রাটের নিজ জন্মভূমি উজান ধলের সবুজ মাঠে শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটায় এ লোক উৎসবের উদ্বোধন করেন স্বাধীনতা পদক (সমাজসেবা) প্রাপ্ত ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ( চেয়ারম্যান পি কে এস এফ )। করিমপুত্র শাহ নুর জালালের সভাপতিত্বে এবং জয়ন্ত দাস ও আপেল মাহমুদের সঞ্চালনায় শাহ আবদুল করিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, একুশে পদক প্রাপ্ত সুষমা দাস, ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন. মো: আবদুল কাদের, সানোয়ারা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান, ড. জাহেদ আহমদ, মো: শাহিন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, হাফিজুর রহমান তালুকদার, সাংবাদিক দ্রুপদ চৌধুরী নুপুর, ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরী, সাংবাদিক সোয়েব হাসান প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড.কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, শাহ আবদুল করিম আজন্ম মানবতার জয়গান করে গেছেন, তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ থেকে আমরা আজ বিচ্যুত। আমাদেরকেও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে, মানবতার কল্যাণই সমাজ ও রাষ্ট্রকে কল্যাণমুখী করে তুলতে পারে। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ফেব্রæয়ারী দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় শাহ আবদুল করিমের। হাওরের কাঁদা জল আর অভাব অনটনে বেড়ে উঠা শাহ আবদুল করিম একাডেমীক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও প্রাকৃতিক ভাবেই তিনি মহামনীষির খেতাব লাভ করেছেন। তার রচনায় ফুঁটে উঠেছে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা, আছে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের কথা। একুশের চেতনায় স্বাধীনতার শক্তি, বিদ্রোহী এক মানব একুশে পদক প্রাপ্ত বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম। তার দর্শন, চিন্তা ও চেতনায় গণ-মানুষের পক্ষে গানকে তিনি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’ যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৫৭’র কাগমারী সম্মেলন, ৬৯’র গণ আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, ৯০’র গণ অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই তিনি গানকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছেন। তিনি গেয়েছেন মানুষের জয়গান, গানে গানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরনা জাগিয়েছেন। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার জীবদ্দশায় ২০০৬ সাল থেকে ধল গ্রামবাসীর উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় শাহ আব্দুল করিম লোক উৎসব। এরই ধারাবাহিকতায় এটি হচ্ছে ১৫ তম লোক উৎসব। আলোচনা শেষে সন্ধ্যার পরপরই শুরু হয় গানের অনুষ্ঠান করিমগীতি। এতে গান পরিবেশণ করেন, অতিথি ও স্থানীয় বাউল শিল্পীবৃন্দ।