সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় তৈরি জনপ্রিয় মুখরোচক কুমড়ো বড়ির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। ভোজনপ্রেমীদের কাছে এর রয়েছে আলাদা কদর। কুমড়ো বড়ি তৈরি ও বিক্রি করে জীবিকা চলছে তাড়াশের বেশ কয়েকটি পরিবারের। এ বড়ি সারা বছর তৈরি করা গেলেও এর মূল মৌসুম শীতকাল। এ সময় তৈরি হয় সবচেয়ে বেশি। শীতের সবজির সঙ্গে কুমড়ো বড়ির একটা যোগসূত্র খুঁজে পান অনেকেই। তাই চাহিদাও বাড়ে এ সময়। সরেজমিনে তাড়াশ উপজেলার নওগাঁয় গিয়ে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০টি পরিবার কুমড়ো বড়ি তৈরি করছেন।
শীতে কুমড়োর বড়ির স্বাদ অতুলনীয়। গ্রামের উঠানে ভোরবেলায় চাল কুমড়ো ও মাষকলাইয়ের মিশ্রণ করে মণ্ড তৈরি করতে বসে যান নারীরা। এরপর বাঁশের কাঠির তৈরি নেটের ওপর পাতলা কাপড় দিয়ে হাতের মধ্যে বিশেষ কায়দায় বড়ি বানানোর প্রতিযোগিতা গৃহবধূদের মধ্যে শুরু হয়। যান্ত্রিক যুগে কুমড়োর বড়ি প্রস্তুতির পদ্ধতি বদলে গেছে। আগে ডাল ও চাল কুমড়ো তৈরি করা হতো ঢেঁকিতে। কিন্তু এখন বড়ির মণ্ড তৈরি হয় যান্ত্রিক মেশিনে। তারপরও বড়ির চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে নারীদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি হয়েছে। কুমড়োর বড়ি তৈরির কাজ অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও তুলে ধরছে। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ক্ষুদ্র ঋণের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান বড়ি প্রস্তুতকারী নারীরা। মৌসুমি এ ব্যবসা চলে শীতের শেষ পর্যন্ত। স্বল্প সময়ের এই ব্যবসার লভ্যাংশ দিয়ে পরিবারের বছরের খরচ চলে। এ বছর সাধারণ মানের কুমড়োর বড়ি প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, ভালো মানের কুমড়ো দিয়ে তৈরি বড়ি ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এমনটি জানিয়েছেন এলাকার বড়ি প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারী ব্যবসায়ীরা। অনেকে দেশ-বিদেশে স্বজনদের কাছে কুমড়োর বড়ি পাঠিয়ে থাকেন। সাধারণত নারীরাই এ কাজ করে থাকেন। নওগাঁ গ্রামের রজিনা, হালিমা, শাপলা, রজনী, আলুফা, শারমীন, কেয়া সহ প্রায় শতাধিক নারী প্রতিদিন এ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাংলা সনের কার্তিক থেকে ফ্লাগুন মাস পর্যন্ত কুমড়োর বড়ির চাহিদা বেশি থাকে। তাই এ বছরও অক্টোবর মাস থেকে বড়ি তৈরি করা শুরু হয়েছে। এটি চলবে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত। গত বছর মাষকলাই ডাল প্রতি কেজি ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এ বছর ওই ডাল ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। দাম কিছু বেড়েছে, কিন্তু বড়ির স্বাদ এক আলাদা ব্যাপার। নাজমা খাতুন জানান, কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে প্রথমে প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো। কিন্তু এখন মেশিনের মাধ্যমে ডাল গুঁড়ো করা হয়, শুধু হাতের মাধ্যমে বড়ি তৈরি করতে রোদে শুকতে হয়। আর এ কাজে সহযোগিতা করে পরিবারের সদস্যরা। সরকারের দেয়া কিছু সুবিধা পেলে বড় পরিসরে বড়ি তৈরি করে রপ্তানি করা সম্ভব বলেও জানান । তিনি আরোও বলেন কুমড়ো বড়ি আমরা বংশপরায়ণভাবে তৈরি করি। আমার বাপ-দাদা তৈরি করেছে, আমি তৈরি করেছি, এখন আমার ছেলে আর নাতিপুতিরা তৈরি করছে। এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার রফীন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, ‘কুমড়ো বড়ি তৈরি করে উপজেলায় অনেক নারীদের সমস্যা দূর হচ্ছে। আমরা আমাদের অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ করিয়ে নারীদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করব।
Please follow and like us: