
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের ঢালুয়া ইউনিয়নের চরজামুরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তাহেরা আক্তারের অশালীন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে শিক্ষার্থী শূণ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষিকা ও তার স্বামী আবুল হাশেমের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওই স্কুলের অপর দুই শিক্ষিকা তাসলিমা নূর ও রোকসানা আক্তার নিজেদেরকে ওই স্কুল থেকে অন্যত্র বদলি করার আবেদন করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে। অপর দিকে প্রাধান শিক্ষিকার অশালীন আচরনে শিক্ষার্থী শূণ্য হওয়া স্কুলটি রক্ষায় প্রধান শিক্ষিকা তাহেরাকে এ স্কুল থেকে বদলি করে অন্যত্র নিয়ে যেতে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করেছে স্কুলটির প্রাক্তন সভাপতি, দাতা, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলো তদন্তে মঙ্গলবার দুপুরে ওই স্কুলে আসেন নাঙ্গলকোট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল ওয়াহাব, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হোসাইন আহম্মেদ ও পাশ্ববর্তী মন্নারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন। অভিযোগ তদন্তে শিক্ষা বিভাগের লোকজন চরজামুরাইল স্কুলে আসার খবরে স্কুল প্রাঙ্গণে জড়ো হন এলাকার শতশত মানুষ। তদন্ত কর্মকর্তাগণ তাদের মধ্যে থেকে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বললে সবাই ওই শিক্ষিকাকে অপসারণ করে স্কুলটি রক্ষার দাবি জানান।
চরজামুরাইল স্কুলের অপর দুই শিক্ষিকা রোকসানা আক্তার ও তাসলিমা নূর তাদের অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তাহেরা আক্তার এ প্রতিষ্ঠানে আমরা আসার পর থেকে আমাদের দুইজন মহিলা শিক্ষকের সাথে নোংরা ভাষায় গালি দেয়। বিভিন্ন ধরনের ধমক ও হুমকি দেয়। বিভিন্ন সময় আমাদেরকে অযোগ্য, পাগল “প্রতিবন্ধী”বলে ডাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করার পরও এস.এস সি পাশ তাহেরা আক্তার আমাদেরকে “মানসিক রোগী” বলে গালি দেয়। দাপ্তরিক কোন কাজে আমাদের দুইজনকে শেয়ার করেনা। আমাদেরকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিবেন বলে হুমকি দেন। আমাদের বাবা-মা কে নিয়ে গালমন্দ করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করে এই কারণে তিনি তাদেরকে অনেক বকাঝকা করেন। আমাদের সাথে যাতায়াত করলে শিক্ষার্থীদের পায়ের নলা কেটে দিবেন বলে হুমকি দেন। তিনি বিদ্যালয়ের পাশে যাতায়াতরত গাড়ি চালক, মাঠের কৃষকদের নিকট গিয়ে আমাদেরকে নিয়ে বাজে বাজে কথা বলেন। নৈমিত্তিক ছুটির জন্য বললে ম্যাডাম আমাদেরকে বলেন, জুতা দিয়ে পিটালেও তো ছুটি দিচ্ছি, এইটাই অনেক’। ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার কারণে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে কটাক্ষ করা তার নিয়মিত কাজ। এছাড়া স্কুলে এসে তাহেরা আক্তারের স্বামী আব্দুল হাশেমও আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ে অপমান জনক কথাবার্তা ও আক্রমন করেন। বর্তমানে আমরা দুইজন তার “বুলিং” এর স্বীকার। এমতাবস্থায় আমরা ২জন ভুক্তভোগী উক্ত অফিসে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাহেরা আক্তার এর অধিনে কাজ করার শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছি। তাহেরা আক্তারের হিং¯্রতার কবল থেকে মুক্তি এখন আমাদের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আবেদনটিতে এ বিদ্যালয় হতে অন্য কোন বিদ্যালয়ে তাদেরকে সংযুক্তি দিতেও আবেদন করেন ভূক্তভোগী দুই শিক্ষিকা।
এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা শিক্ষা অফিসে অভিযোগ করেন এ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন মেম্বার, স্থানীয় সিজিয়ারা মাদরাসা সহ-সুপার মাওলানা নুরুল আমিন ও শিক্ষক মাওলানা নুরুল আনোয়ার আফসারী, অভিযোগে উল্লেখ করা হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তাহেরা আক্তারের অসাদাচারণে এ স্কুল থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান সাবেক প্রধান শিক্ষক আওরঙ্গজেব, শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার ও শিক্ষক মাঈন উদ্দিন। এছাড়া তাহেরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর স্কুল ভবনের সামনে থাকা দাতা সদস্যদের নাম মুছে পেলেন এবং তার আচরণে ২শ থেকে ২শ’ ৫০জন শিক্ষার্থীর স্কুলটিতে এখন মাত্র ১০-১৫জন শিক্ষার্থী আছে বলে উল্লেখ করেন।
এব্যাপারে অভিয্ক্তু তাহেরা আক্তার বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ মিথ্যা। স্কুলে বর্তমানে ৭০জন শিক্ষার্থী আছে বলে তিনি দাবি করলেও কতজন প্রতিদিন উপস্থিত থাকেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন প্রতি শ্রেণীতে ৮-১০জন।
এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল ওয়াহাব ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হোসাইন আহম্মেদ বলেন, শিক্ষিকা তাহেরা আক্তারের বিরুদ্ধে অপর দুই শিক্ষক ও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে। আমরা তদন্ত করছি, তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।