
পাটের কাঙ্খিত দাম পাচ্ছে না চাষীরা। ফলে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে চাষীদের মধ্যে। চাষিদের দাবি- গত বছরের তুলনায় এবছর একই সময়ে প্রতিমণে ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা কম দামে পাট কেনা বেচা হচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। চাষীদের উৎপাদন খরচ বিবেচনায় পাট বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পাটের দাম কমিয়ে রেখেছেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা হাটে পাট বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ১৯’শ থেকে ২২৫০ টাকা দরে। একই মানের পাট গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৩২’শ টাকা দরে। সেই হিসেবে পাট চাষিরা এবছর পাট বিক্রি করে প্রতিমণে ১ হাজার টাকা কম পাচ্ছেন।
পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার কৃষক বেলাল হোসেন ১ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, পাট চাষে যে পরিশ্রম করি সেই টাকা পাই না। গত বছরের চেয়ে এবছর পাটের দাম মণে ১ হাজার টাকা কম। পানির সঙ্কটের কারণে এবছর পাট জাগ দিতে কৃষকের অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ভেদে এক বিঘা জমির পাট কেটে পানিতে জাগ দিতে একেক কৃষকের খরচ হয়েছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, পাট শুকানো, পাট বাধাই করা, গাড়িতে করে হাটে নিয়ে আসা পর্যন্ত কৃষকের খরচ হয়।
তিনি আরো বলেন, তুলনামূলক পাট বিক্রি করে কৃষকের মণে ১ হাজার টাকা লোকসান হবে এই বছর। কারণ লাভের টাকা পাট জাগ দেওয়া বাবদ শেষ হয়েছে। এবছর কোনো কৃষক নিজের ইচ্ছেমত সহজ জায়গায় পাটের জাগ দিতে পারেনি। কারণ পানির অভাব। অনেকেই আবার পাট জাগ দিতে পুকুরও ভাড়া নিয়েছে। কৃষককে এক মণ পাট তৈরি করতে প্রায় ২ হাজার টাকা খরচই পড়েছে। কিন্তু হাটে এসে কৃষককে সেই পাট বিক্রি করতে হচ্ছে ২ হাজার টাকা মণ দরে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে পাট কাটা শুরু হয়েছে। এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৪৪২ হেক্টর বেশি জমিতে এই পাটের চাষ হয়েছে। চাষিদের মধ্যে অনেকের জমিতে এখনও পাট রয়েছে। অনেকেই পাট কেটে জাগ দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বিক্রিও করছেন হাট-বাজারে। তবে বেশির ভাগ উপজেলায় বর্তমানে পাট কাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছড়ানো এবং শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রতিদিনই রাজশাহী জেলার কোনো না কোনো উপজেলায় পাটের হাট বসে। কৃষকরা তাদের পাট নিয়ে বিক্রি করতে আসেন হাটে। জেলার পুঠিয়া, তাহেরপুরে পাটের হাট বসে সপ্তাহের শুক্রবারে। সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার পুঠিয়ার বানেশ্বরহাটে পাট কেনাবেচা হয়। আর রোববার ও বুধবার দুর্গাপুর উপজেলায় পাটের হাট বসে। বৃহস্পতিবার পবা উপজেলার নওহাটা ও পুঠিয়ার ঝলমলিয়ায় হাট বসে। যদিও এই দিনগুলো সাপ্তাহিক হাট বার।
রাজশাহী জেলার বিভিন্ন হাট থেকে পাট কেনেন মাহাবুবুল আলম। তার পুঠিয়ার উপজেলায় বানেশ্বর হাটে পাটের আড়ৎ রয়েছে। পাটের ব্যবসার সাথে তিনি ১২ বছরের বেশি সময় ধরে জড়িত। ব্যবসায়ী হলেও তার কথায় উঠে এসেছে কৃষক পাটের দাম কম পাচ্ছে। মাহাবুবুল আলম বলেন, পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কৃষক। বর্তমানে ২ হাজার থেকে ২২’শ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। গত বছর মৌসুমের শুরুতে ৩ হাজার টাকা মণ দরে পাট কিনেছেন তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় প্রতিমণে ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা পাটের দাম কম। তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, যে সকল দেশ বাংলাদেশের কাঁচা পাট কেনে, তারা বিশ^মন্দার কারণে পাট কিনছে না। ফলে আমাদের দেশের পাট রপ্তানি করতে পারছি না। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যাচাই বাচাই করে পাট কিনছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, এবছর পাটচাষিরা বিপাকে পড়েছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে পাটের ফলন ভালো হয়নি। তার উপরে পাট উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এখন আবার কৃষক পাটের দাম পাচ্ছে না। লক্ষ্য করা যায়, যে কোন ফসল উঠার সময় সিন্ডিকেটের দখলে পড়ে যায়। সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে রাখা হয়। বিষয়টি সরকারকে দেখা দরকার। কোনোভাবেই কৃষকদের হতাশ করা যাবে না। সরকারকে প্রতিবছর পাটের একটা ন্যায্য দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে।