বাগেরহাটের রাখালগাছি দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার জুনিয়র শিক্ষক ও ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মোঃ মোজাফফর হোসেন এর বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ করেছে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বুধবার (২৭ নভেম্বর) বেলা ১১ টায় মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য এবং সরকারি ধান বিক্রির অভিযোগ করেন তারা। সেই সাথে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু শামীম আসনু ও যুবলীগ নেতা টিটু কাজীর প্রধান হাতিয়ার এবং বর্তমানে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ইউনিয়ন সভাপতি হয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে এমন অভিযোগ এনে শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাফফর হোসেনকে চাকরি থেকে অব্যাহতির দাবি করেন।
ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বড় ভাই মোতালেব হোসেন জানান, বিদেশে পাঠানোর কথা বলে আমার ছেলের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে। টাকা নিয়ে মোজাফফার বাড়ি নির্মাণ করেছে। আমরা শেষ হয়ে গেছি। সে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে স্থানীয় চেয়ারম্যান আসনু এবং যুবলীগ নেতা টিটু কাজির ভয় দেখিয়ে আমাদের আটকে রেখেছে। বিচার দিয়েও কোথাও বিচার পাইনি। টাকা ফেরত এবং দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের বিচার চান মোতালেব হোসেন।
রাখালগাছি ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমান সেন্টু বলেন, মোঃ মোজাফফর নামের শিক্ষক রাখালগাছি মাদ্রাসায় অনেক অনিয়ম করেন। ঠিকমতো হাজিরা দেন না। হাজিরা দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত কাজে চলে যান। আগে আওয়ামী লীগের বড় নেতাদের নিয়ে চলাফেরা করতেন। এখন আবার বিএনপি’র বড় একটি পদ নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি করে যাচ্ছে। মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগে ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সদর উপজেলা পরিষদ থেকে গরিব কৃষকের নামে ধানের বীজ এনে পার্শ্ববর্তী বাজারে বিক্রি করেছে। তাকে চাকরি থেকে অচিরেই অব্যাহতি দেওয়া উচিত।
স্থানীয় যুবদল নেতা নাজমুল হোসেন বলেন, মোজাফফর হুজুর আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। প্রভাব দেখিয়ে ঠিকমতো মাদ্রাসায় আসেন না। প্রতিষ্ঠানে এসে হাজিরা দিয়ে বরশি নিয়ে মাছ শিকার করতে চলে যান। প্রতিষ্ঠান প্রধান তাকে কিছু বলতে পারেন না। তাকে সবাই ভয় পায়। বর্তমানে বিএনপি’র একটি পোস্টে নাম লিখিয়ে উপজেলা থেকে ধানের বীজ এনে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। তার বিচার হওয়া উচিত।
আনীত অভিযোগের বিষয়ে মোজাফফর হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি নিয়মিত মাদ্রাসায় আসি। খাতা কলমে কোন ধরনের অনিয়ম নেই। আমি কৃষক দলের নেতৃবৃন্দের কাছে ৪৫ থেকে ৫০ জনের নামের তালিকা দিয়েছিলাম। যার যার ধান উপজেলা থেকে সেই তুলে নিয়ে আসছে। আমি ৫-৬ জনের ধান নিয়ে এলাকায় এসে তাদের দিয়ে দিয়েছি। দুই বছর আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাকে পিটিয়ে আহত করেছে। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নই।
উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব হাওলাদার রফিকুল ইসলাম জানান, মোজাফফর হোসেন রাখালগাছি ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি। গরিব চাষীদের ধানের বীজ নিয়ে দুর্নীতি মেনে নেওয়া হবে না। এখনই তদন্ত করে প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাখালগাছি দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপারেনটেন্ট মাওলানা মোঃ ওমর ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরিজীবীদের আওয়ামী সমর্থক নেতাকর্মীদের সাথে চলতে হয়েছে। তাদের সাথে ছবি তোলা হয়েছে। সে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত আমি জানিনা। মাদ্রাসায় এসে কোথাও যেতে হলে আমার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে যায় এ সংক্রান্ত আমাদের একটি রেজিস্টার খাতা রয়েছে। কে কোথায় যাচ্ছে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। ধানের বীজের বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।
Please follow and like us: