১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

শিরোনামঃ-
  • হোম
  • দেশজুড়ে
  • ভবন ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই গৌরনদী শহীদ স্মৃতি পাঠাগার এখন উইপোকা-ইঁদুরের নিরাপদ বাসস্থান!




ভবন ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই গৌরনদী শহীদ স্মৃতি পাঠাগার এখন উইপোকা-ইঁদুরের নিরাপদ বাসস্থান!

আরিফিন রিয়াদ, গৌরনদী,বরিশাল করেসপন্ডেন্ট।

আপডেট টাইম : ডিসেম্বর ১৯ ২০২৪, ২০:৩৭ | 620 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

নিজ উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী এলাকার শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের জ্ঞান আহরনের জন্য একসময় সরব ছিল বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শহীদ স্মৃতি পাঠাগার। দীর্ঘদিনেও সংরক্ষণের অভাবে বিভিন্ন ভাষার দুর্লভ ৬ হাজার গ্রন্থের ভান্ডারের পাঠাগারটি এখন নিজেই যেন স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি স্মরণে নির্মিত পাঠাগারটি এখন উইপোকা আর ইঁদুরের নিরাপদ বাসস্থান।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ১৯৭৫ সালের ৭ মে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশ্ববর্তী সরকারী গৌরনদী কলেজ ও গৌরনদী কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদের সামনে পাঠাগারটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাঠাগারের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব পালন করতেন সরকারি গৌরনদী কলেজের যেকোন একজন শিক্ষক।
সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিনশ’ পাঠক এসে এখানে বই পড়তেন। এছাড়া প্রায় শতাধিক সদস্য নিবন্ধন করে বই পড়ার জন্য বাড়ি নিয়ে যেতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময়ের সরব এই পাঠাগারে ছিলো নিবন্ধিত বিভিন্ন ভাষার দুর্লভ বই ও প্রতিদিনের বাংলা-ইংরেজী এবং সাপ্তাহিক পত্রিকা। এই পাঠাগারে ছিলো পরিচালনা কমিটি ও সহস্রাধিক আজীবন ও সাধারণ সদস্য। আটটি বৈদ্যুতিক ফ্যান, ১৫০টি চেয়ার ও ১৫টি বড় টেবিলসহ তিন কক্ষ বিশিষ্ট এই পাঠাগারটির দেখভাল করতেন একজন লাইব্রেরিয়ান, একজন সহকারি লাইব্রেরিয়ান ও একজন নাইটগার্ড। পাঠাগারের বৈদ্যুতিক বিল ও স্টাফদের বেতন দেয়া হতো সদস্যদের চাঁদা ও বিশিষ্টজনদের অনুদান এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিশেষ অনুদানের মাধ্যমে। সরকারিভাবে বাংলাদেশ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রতিবছর সাত হাজার টাকার বই দেয়া হতো এই পাঠাগারে।
সূত্রমতে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৮ সালে পাঠাগারটির রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় গৌরনদী পৌরসভা। আর তখন থেকে সদস্যদের চাঁদা থেকে বৈদ্যুতিক ও যাবতীয় খরচ এবং পৌরসভা থেকে বিশেষ বরাদ্দকৃত অর্থের মাধ্যমে পাঠাগারের স্টাফদের বেতনের টাকা বহন করা হতো।
গৌরনদী শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য মো. সাইদ বীন ভূঁইয়া পান্নু বলেন, ২০১১ সালে যখন হারিছুর রহমান পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন তখন পৌরসভার থেকে আসা পাঠাগারের জন্য বিশেষ বরাদ্দকৃত অর্থ তিনি বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে স্টাফদের বেতন ও যাবতীয় খরচ বহনে হিমশিম খেতে হয়। পরবর্তীতে যখন আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসে তখন পাঠাগারের সমস্ত দায়িত্ব পৌরসভার বলে লাইব্রেরিয়ানের কাছ থেকে চাবি নিয়ে যায় তৎকালীন পৌর মেয়র হারিছুর রহমান। এছাড়াও মেয়র হারিছের নেতৃত্বে পাঠাগারটির কক্ষে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের রড, ইট, বালু সিমেন্ট রাখা এবং নির্মাণ শ্রমিকদের থাকতে দেওয়া হয়। শ্রমিক থাকার কারণে পাঠাগারে যত্রতত্র মানুষ অবাধে আনাগোনা শুরু করে। একপর্যায়ে দেখা যায় পাঠাগারের প্রায় ১৫ হাজার বইয়ের একটি বইও নেই।
তিনি আরও বলেন, একই সময় স্থানীয় মাদকসেবী ও ছিচকে চোর পাঠাগারের জানালার গ্রীল ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে পাঠাগারের বিভিন্ন আসবাবপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। সেসময় মেয়র হারিছুর রহমানের ভয়ে কেহ পাঠাগারের কাছে যেতে সাহস করেননি।
গৌরনদীর প্রবীণ কবি ও লেখক শিকদার রেজাউল করিম বলেন, প্রথমে এই পাঠাগারটির নাম গৌরনদী শহীদ স্মৃতি পাঠাগার হিসেবে নামকরন করা হয়। পরবর্তীতে ক্ষমতার পালা বদলে এর নাম পরিবর্তন করে গৌরনদী পাবলিক লাইব্রেরী করা হলেও আবার পুনরায় এর নাম গৌরনদী শহীদ স্মৃতি পাঠাগার করা হয়। তিনি আরও বলেন, এখানে বাংলা, ইংরেজী, আরবী, ফারসি ভাষার অনেক দুর্লভ গ্রন্থ ছিল। পাঠাগারটির বর্তমান অবস্থান থেকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করছি।
গৌরনদী শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতাকালীন আজীবন সদস্য ও পৌর নাগরিক কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম জহির বলেন, পাকা ভবন হওয়ার পরে আরো জমাজমাট হয়ে উঠেছিল পাঠাগারটি। তখন পাঠক বা সদস্য হওয়া ছিলো অনেকের কাছে গর্বের। পাঠকদের জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে আত্মার খোরাক ছিলো এবং তরুণ প্রজন্মকে সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষার হাতিয়ার ছিল এ পাঠাগারটি।
সার্বিক বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, গৌরনদীবাসীর স্মৃতি বিজরিত শহীদ স্মৃতি পাঠাগারটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এটি একসময় খুবই প্রানবন্ত ও জমাজমাট ছিল। এখানে ছিলো অসংখ্য দুর্লভ গ্রন্থ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি স্মরণে নির্মিত এই পাঠাগারটি সংরক্ষণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অচিরেই আমরা গঠণতন্ত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি- আলহাজ্ব আবদুল গফুর ভূঁইয়া,সাবেক সংসদ সদস্য, প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

 

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত।

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET