রাজশাহীর তানোর উপজেলার একেবারে প্রত্যান্তঞ্চল একটি গ্রামের নাম গৌরাঙ্গাপুর। গৌরাঙ্গাপুর মৌজার প্রায় ৩০০ একর পুরোটাই উঁচু-নিচু ঢেউ খেলানো বরেন্দ্রের পটভূমি। পুরো মৌজা জুড়ে চাষ হয়েছে রবিশস্য। কেউ পেঁয়াজ, রসুন কেউ গম, সরিষা, মুসুর, ছোলা চাষাবাদ করেছেন।
অন্যদিকে একই উপজেলা পাঁচন্দর ইউপি, কলমা, তালান্দ, সরমজাই ও চান্দুরিয়া ইউনিয়নের মাঠগুলোতে যতদুর চোখ যায় শুধু আলু আর আলু। বরিশস্যর এমন চিত্র শুধু তানোর উপজেলার মাঠই নয়, চলতি মৌসুমে বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজার হাজার মাঠে রবিশস্য চাষাবাদ করেছেন কৃষকেরা।
বরেন্দ্র অঞ্চলে এক দশকের বেশি সময় ধরে ভূ-গর্ভস্থ পানিরস্তর আশঙ্কাজনকভাবে নীচে নেমে যাচ্ছে। একারণে কৃষি আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। বরেন্দ্র অঞ্চলে ধানসহ সেচ নির্ভর চাষাবাদ কমেছে। অপরদিকে কম পানি সেচে চাষ করা সম্ভব গম, ছোলা, আলু, মসুর, পেঁয়াজসহ অন্য রবিশস্যের চাষ বেড়েছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসরণের অফিসের তথ্য অনুযায়ি, জেলায় কৃষি আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ এক লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে গত বছর রবিশস্য চাষাবাদ হয়েছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৮ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর ১৩ হাজার হেক্টর রবি-শস্য বেড়ে চাষাবাদ হচ্ছে এক লাখ ৫০ হাজার ৪৫৮ হেক্টর জমিতে।
গত বছর মাঠে আলু আবাদ হয়েছিলো ৩৮ হাজর ৩২৫ হেক্টর জমিতে, চলতি বছর ৫ হাজার হেক্টর বেড়ে হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৮১ হেক্টর। মিষ্টি আলু ২৬৯ হেক্টর থেকে বেড়ে চলতি বছর চাষ হচ্ছে ৩১২ হেক্টর জমিতে। ভুট্টা এক হাজার ৫৮৭ হেক্টর থেকে বেড়ে চাষ হচ্ছে দুই হাজার ৪৭৮ হেক্টর জমিতে।
এছাড়াও শীতকালিন বিভিন্ন সবজি চাষ হচ্ছে ১২ হাজার ৮৪৪ হেক্টর, ছোলা এক হাজার ১২৮, মসুর ২৫ হাজার ২৯৬ হেক্টর, চিনা বাদাম ৬০৬ হেক্টর, সরিষা ১৯ হাজার ৪৯৬ হেক্টর, মুগ ডাল ১৫ হেক্টর, খেসাড়ী ডাল ৫০৮ হেক্টর, মটর ২০৬ হেক্টর, পেঁয়াজ ৭ হাজার ৩০ হেক্টর, রসুন ৩ হাজার ৫৪৬ হেক্টর, আখ ৬ হাজার ৪৪৩ হেক্টর জমিতে।
তানোর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শমসের আলী জানান, তানোরসহ বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে পুরো ভূ-গর্ভস্থ পানিরস্তর আঙ্কাজনকভাবে নীচে নেমে যাচ্ছে। পানি উত্তোলনে নানা সমস্যায় চাষিরা কম সেচের আবাদে ঝুকছেন। রবিশস্যতে একদিকে পানি খরচ কম, অন্য দিকে রবি শস্যতে লাভ বেশি হচ্ছে।