বিংশ শতাব্দির এক অনন্য জাদুকর কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। যার জাদুতে মগ্ন ছিল হাজার ,হাজার তরুণ মন। এই শতাব্দিতে যারা বেড়ে উঠেছিল, তারুণ্যের পথে এই হুমায়ূন আহমেদের লেখা দিয়েই তাদের সময়ের সিঁড়িতে হাঁটা , যৌবনের উপলব্দি! প্রেমের হালখাতার পাটখড়িতে আনাগোনা করা তার বই পাঠ দিয়েই শিখতো। কলেজ,ভাসির্টির করিডোরে হুমায়ূণ বই নিয়ে অনেক যুগলের মনোযোগে আলাপচারিতা। বই-এ কি আছে তা নিয়ে গবেষণা! টিনএজ ছেলেমেয়ে,তরুণ-তরুণীদের হার্ট থ্রব তখন হুমায়ূন আহমেদ। তুমুল জনপ্রিয় তখন তিনি। তার বই ,তার একটা লাইন ,শব্দ পড়তে ব্যাকুল থাকতো। বাঁধন হারা উন্মাদনা ক্রমশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল বাংলার টেকনাফ-তেঁতুলিয়া। কোন এক সাধারণের ঘরে গেলেও শোকেছে,আলমিরায় বা যেখানে যার যেমন অবস্থা বই একটা থাকতোই । সেটা কার বই ? হমায়ূন আহমেদের বই। একটা মোকছুদুল মোমিন, তার পাশে হুমায়ূন আহমেদ। বাংলার কুল বধু সেও তখন হুমায়ূন নামার সাথে পরিচিত। হয়তো সে গাঁয়ে লেখাপড়ার এতো তীব্রতা ছাড়ায় নি; কিন্তু হুমায়ূন পরিচিতি চলে গেছে। বাড়ন্ত বয়সে উচ্ছল মনে একটা হুমায়ূন বই পারতো তৃপ্তি মেটাতে! জাদু সত্যিই এক জাদুর বাহক ছিলেন তিনি। টিভি নাটক দেখে এতো প্রেম আসতো তার প্রতি নারী-পুরুষের। বাংলাদেশের এমন কোন পরিবার নেই যে ,হুমায়ূনের ভক্ত নেই । একজন হলেও ঘরের সদস্য আছেই ! কবিতা, গান, বাঁশি বাজানো ,নাটক গল্প, উপন্যাস কি লিখেন নি তিনি! ছবিও আঁকতেন মন দিয়ে। এতো গুণ , এতো রস মনে হয় না কোন বাঙ্গালি লেখকের থাকে! এক রবীন্দ্রনাথের পরেই হুমায়ূণ সর্বগুণে গুণাম্বিত ছিলেন। আরো কয়েকটা বছর যদি হুমায়ূন পেতেন গোলা ভরে সাহিত্যকে আরো উজ্জিবিত করে রেখে যেতেন। যা রেখে গেছেন অনেক । তবুও, তার অনেক দিবার ছিল। পারেন নি। ক্যান্সার তাকে হারিয়ে দিয়েছে। জীবনের কাছে তিনি ক্ষয়ে গেছেন। এই বাংলার সাহিত্যের আধুনিকতায় তিনিই ছিলেন শীর্ষ মুকুট। যার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। ২০১২ সালে মৃত্যুর পর ২০১৭ অবধি তার বই ছিল বেস্ট সেলারের তালিকায়। আজো এতটুকু আবেগ ,কদর কমেনি তার প্রতি ও বই পাঠে। মেলা আসা মানেই হুমায়ূন আহমেদের বই আজো। স্টলে, স্টলে শুধু বই আর বই তার। তাকে ঘিরে এক সময় বাংলা একাডেমির চত্বর লাইন ধরে যেত ইয়া লম্বা। শুধু তার একটা অটোগ্রাফসহ বই নিতে । কি যে বিক্রির ধুম প্রথমা স্টলে ! এতো জনপ্রিয়তা এই বাংলাদেশে আর কোন লেখকের নেই। যদিও ইমদাদুল হক মিলন ও তার ভাই জাফর ইকবালেরও একটা ¯্রােত আছে। তবে, হুমায়ূণের খ্যাতির কাছে তা সামান্য।
যার লেখা ছিল নেশা ও পেশা। লিখে , লিখে তিনি বিশাল বাজেটে নূহাশ পল্লী সাজিয়েছেন বহু স্বপ্ন নিয়ে থরে থরে। এ এক সাহিত্য জগৎ যেন নূহাশ পল্লী। গাজিপুরের সে নূহাশ পল্লী দেখতেও হাজার মানুষের ভিড়! এমনি এক হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টির প্রতি মুগ্ধতা। যার প্রতিটি সৃষ্টি ছিল অসাধারণ ! সাহিত্য, সাহিত্য ভাব তার প্রতি কাজে। বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্যকে তিনি যেভাবে ফোটাতেন এভাবে কোন নাট্যকার ,পরিচালককে করতে বাংলাদেশে দেখা যায়নি।
প্রতি মুহুর্তটা তিনি লেখালেখির কাজে ব্যয় করতেন। লেখালেখি ছাড়া যার চলতোই না। কঠিন কষ্টের কেমোথেরাপি নিয়েও তিনি দুহাত ভরে লিখেছেন নিউইয়র্কের আকাশের নিচে বসে। প্রথম আলোর জন্য নিয়মিত কলাম ‘নিউইয়র্কের আকাশে ঝলমলে রোদ’। তার সর্বশেষ সৃষ্টি ‘দেয়াল ’সেভাবেই, সেই অসুস্থ অবস্থায়ই লেখা! এমন কয়জন আছে লেখক? হুমায়ূণ আহমেদ নেই। আর আসবেও না; একজন হুমায়ূণ আহমেদ। সাহিত্যকে যে প্রাত্যহিক জীবনের কোণে কোণে ছুঁয়েছেন। তার সিনেমা ও নাটক দেখলে তা বেশী উপলব্দি হয়। তার সৃষ্টির আবেদন থাকবে যুগ যুগ।
লেখক- গণমাধ্যমকর্মী, সাহিত্যিক। ফেনী।
শিক্ষার্থী
পোষ্ট গ্রাজুয়েশান ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম
বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট,ঢাকা।