চাকুরী হারান বেকার ভাড়াটিয়া শাহাবুল টাকার অভাবে বাচ্চার দুধ কিনতে পাচ্ছিল না। সে বাড়ির মালিকের ঘরে চুরি করতে গিয়ে মালিক দেখে ফেলায় তাকে জবাই করে হত্যা করে ।
“সেই দিন কি ঘটেছিল আরো বিস্তারিত জানতে পুলিশের কথা পড়ুন”
বারখাদা মধ্যপাড়া গ্রামে জালাল উদ্দিন এর একটি ঘটনা। জালালউদ্দিন তার স্ত্রী রিনা সহকারে তার নিজের বাসায় বসবাস করতেন। তার পাশের রুমে ভাড়াটিয়া হিসেবে শাহাবুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী মারিয়া নামে দুইজন ভাড়াটিয়া গত চারদিন আগে জালাল উদ্দিনের বাসা ভাড়া নেন এবং অবস্থান করতে থাকেন।
সাহাবুল একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কিছুদিন আগে তার চাকরি চলে যাওয়ার কারণে সে বেকার হয়ে পড়ে এবং স্ত্রী-সন্তান সহকারে বসবাস করতে আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হন ।
জামাল উদ্দিনের স্ত্রী রিনা বেগম স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে শাড়ি, থ্রি-পিস, লুঙ্গিসহ কাপড়ের ব্যবসা করতেন। সেই সুবাদে তার বাসার ভিতরে অনেক কাপড় থাকতো। বিষয়টি সাহাবুল ও তার স্ত্রী জানতে পেরে জালালউদ্দিনের ঘর থেকে উক্ত কাপড় চুরির পরিকল্পনা করেন।
প্রতিদিনকার মতো জালাল উদ্দিনের স্ত্রী কাপড় বিক্রির টাকা সংগ্রহ করতে বাসার বাইরে গেলে জালালুদ্দিন একা বাসায় থাকেন।
এ সময় সাহাবুল ইসলাম পরিকল্পনামাফিক তাহার মেইন দরজা দিয়ে জালালউদ্দিনের ঘরে প্রবেশ করেন এবং সুকৌশলে সাহাবুলের ঘরের (অন্য একটি দরজা) ছিটকিনি খুলে রাখেন যাতে তার বউ প্রবেশ করতে পারে এবং সাহাবুল জালালুদ্দিনকে ডেকে নিয়ে জালাল উদ্দিনের ঘরের উঠানে গিয়ে বিভিন্ন গল্প শুরু করেন।
এদিকে সাহাবুলের স্ত্রী মারিয়া সুকৌশলে জালালউদ্দিনের ঘরে অন্য দরজা দিয়ে ঢুকে জালালউদ্দিনের স্ত্রীর শোকেসের ভেতরে রক্ষিত থ্রি-পিচ ও কাপড় চোপড় চুরি করার জন্য চেষ্টা শুরু করতে থাকে।
তালা দেওয়া থাকায় একটি ইটের অাধলা দিয়ে শোকেস এর কাঁচে আঘাত করে এবং কাঁচটি ভেঙে যেয়ে শব্দ হয়। ভাঙা কাঁচের টুকরোর শব্দ শুনতে পেয়ে উঠানে থাকা জালালুদ্দিন ঘরের ভিতরে কি শব্দ হচ্ছে তা দেখার জন্য ঘরে যেতে চায় কিন্তু সাহাবুল বিভিন্নভাবে মানা করতে থাকে, একপর্যায়ে জালালুদ্দিন ঘরে আসলে ঘরের ভেতরে সাহাবুলের স্ত্রীকে দেখিতে পায়।
তখন জালালউদ্দিন বলে যে “তোদের এতো বিশ্বাস করে বাড়ি ভাড়া দিলাম অার তোরা কিনা এইসব করতে অাসলি!!!” জালালুদ্দিন তখন সাহাবুল ও তার স্ত্রীকে মারধর করার চেষ্টা করলে এবং সকলকে চুরি করার ঘটনা বলে দেবে বললে, সাহাবুল ও তার স্ত্রী হঠাৎ করে জালাল উদ্দিনের উপরে আক্রমণাত্মক ভাবে আক্রমণ শুরু করেন এবং ইহার ধারাবাহিকতায় সাহাবুল জালাল উদ্দিনকে সজোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এবং তার বুকের উপরে উঠে মুখ চেপে ধরে।
এদিকে স্ত্রী মারিয়া জালাল উদ্দিনের ঘরে টেবিলের নিচে রাখা বটি নিয়ে এসে তার স্বামীকে দেয় এবং জালাল উদ্দিনের হাত ও পা চেপে ধরেন। সাহাবুল উক্ত বটি দিয়ে জালালউদ্দিনের গলায় উপর্যুপরি কোপ দেয় এবং উক্ত বটি দিয়ে জবাই এর মতো করে গলা কেটে দেয়।
মৃত্যু নিশ্চিত হলে তার স্ত্রী জালালউদ্দিনের খাটের উপরের লেপ দিয়ে জালাল উদ্দিনকে ফ্লোরে ঢেকে রাখে এবং তারা দুজনেই বাহির দরজা দিয়ে ভাড়াটিয়া বাসায় চলে যায়।
তারপর বাসায় এসে সুকৌশলে তাদের কাপড়-চোপড় গুলো ধুয়ে রাখেন এবং স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিনের ন্যায় তারা খাওয়া দাওয়া করেন। তারপর তাদের ৬ মাসের বাচ্চাকে নিয়ে তারা পাশের বাসাতে ( পূর্বে ২ মাস আগে ভাড়া থাকতো) যান এবং স্বাভাবিক দিনের মতো গল্প করতে থাকে।
এর কিছুক্ষণ পর জালাল উদ্দিনের স্ত্রী রিনা বাহির থেকে অর্থ কালেকশন শেষ করে বাসায় আসলে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করা দেখলে ভাড়াটিয়া বাসার পাশ দিয়ে ছোট দরজা (অন্য) খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং দেখতে পান তাহার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে পড়ে আছে এবং লেপ দিয়ে ঢাকা। রিনা বেগম জালালউদ্দিনের রক্তাক্ত গলাকাটা মৃতদেহ দেখিয়া চিৎকার দিলে আশেপাশের লোকজনের সহিত সাহাবুল ও তার স্ত্রী স্বাভাবিকভাবে এই লাশ দেখতে আসেন এবং অন্যান্য লোকের সাথে আবার চলে যান এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের বাসায় অবস্থান করেন। কিছুক্ষণ পরে কুষ্টিয়া সদর থানার পুলিশ উক্ত স্থানে পৌঁছালে জালালউদ্দিনের মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করিয়া লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এরপরে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ।কুষ্টিয়া মডেল থানার নেতৃত্বে একটি চৌকস তদন্ত টিম গঠন করা হয়, এবং তদন্ত টিম তাৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করেন। তদন্তকালের একপর্যায়ে পুলিশ পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া সাহাবুল ও মারিয়াদের সহিত ঘটনার বিষয়ে কথা বলেন এবং ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানে কিনা তা জিজ্ঞেস করতে থাকে, তখন সাহাবুল ও তার স্ত্রী একেবারে স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের সাথে বলেন যে তাহারা দুইদিন পূর্বে এই বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে এসেছেন তারা কিছুই জানেন না।
একপর্যায়ে পুলিশ সাহাবুলের বাম হাতের মধ্য আঙুলের গোড়ার দিকে সামান্য কাঁটা দাগ দেখতে পায়, উক্ত কাঁটা দাগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তাহার হাত ব্লেডে কেঁটে গেছে বলে জানায়, তাহার হাত ভালোভাবে দেখিলে তাহার ডান হাতের তালুতে আরো একটি ছোট্ট কাঁটা দাগ দেখতে পায় যা অাপাতঃদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ অাগের কাঁটা, যার ফলে পুলিশের সন্দেহ সৃষ্টি হলে সাহাবুলের পরিহিত জামা খোলার জন্য বললে, সাহাবুলের জামা খোলার পরে তাহার গলার নিচে বুকের উপরে বাম পাশে নখের আঁচড়ের দাগ দেখা যায় ইহাতে পুলিশের সন্দেহ অারো ঘনীভূত হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সাহাবুল স্বীকার করেন যে, সে এবং তার স্ত্রী মারিয়া দুইজনে মিলে উপরোক্ত কারণে জালাল উদ্দিনকে জবাই করে হত্যা করেছেন বলে জানান পুলিশ।