শান্তি,সম্প্রীতি,সহাবস্থান এবং উন্নয়নের লক্ষে খাগড়াছড়ির গুইমারাতে,উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে বিশাল সম্প্রীতির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।গুইমারা কাসেম মার্কেট মাঠে ১৪ নভেম্বর২০২৪ বৃহস্প্রতিবার বিকাল ৫টায় শুরু হওয়া সম্প্রীতির সমাবেশ পাহাড়ী-বাঙ্গালির মিলন মেলা যেন জনসমুদ্রে পরিনত হয়েছে।বিশাল সমাবেশে আসা পাহাড়ী-বাঙ্গালি নারী-পুরুষের উচ্ছ্বাসিত মিছিলের তালে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে তুলে গুইমারা সদরসহ আশ-পাশের এলাকা।দীর্ঘদিন পর পাহাড়ের মাটি-মানুষের নন্দিত নেতার আগমনকে ঘিরে গোটা উপজেলার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ।নেতাকর্মীরা যেন নতুন করে ফিলে পেলো প্রানচাঞ্চল্য।উজ্জিবিত নেতাকর্মীদের প্লেকার্ড,ফেষ্ঠুন ও ব্যানারে উপজেলা সদর ছিল পরিপূর্ণ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক,খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি,সাবেক এমপি ও পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন,পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলোর সাথে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই।অস্ত্রধারী যারাই হোক তাঁরা দেশ ও জাতির শত্রু।পাহাড়ী-বাঙ্গালির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা সুন্দর কাজ নয়,ভালোকাজ নয়।পঞ্চান্ন বছরের বেশী সময় ধরে একটি আদর্শ ঘোষনা করে মানবেন্দ্র লারমা ও সন্তু লারমার নেতৃত্বে শান্তি বাহিনী পাহাড়ে বহু মানুষকে হত্যা করেছে,অগ্নি সংযোগ করেছে,ব্রাশ ফায়ার করে মানুষকে হত্যা করেছে।ছাত্র জীবনে আমি,ছাত্র সেনাদের নিয়ে অনেক লাশ দাফর করেছি।ইউপিডিএফ একটি আদর্শের সংগ্রামের নামে বিগত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে পাহাড়ে বারি অস্ত্র দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে,সেনাবাহিনী,পুলিশ,বিজিবি
তিনি বলেন,সন্তু লারমা এবং ইউপিডিএফসহ পাহাড়ে জন্ম নেয়া সকল বাহিনীর উচিৎ অস্ত্র ফেলে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে এসে সকল সম্প্রদায় ভাই-ভাই হিসেবে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে বসবাস করা।এটাই একমাত্র সঠিক সমাধান এবং স্থায়ী শান্তির উপায়।পঞ্চান্ন বছরে অস্ত্রদিয়ে যে সমস্যার সমাধান হয়নি,আরো পাচঁ হাজার বছরেও অস্ত্রদিয়ে তাঁর সমাধান হবে না।পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে পাহাড়ীও যাবেনা,বাঙ্গালিও যাবে না।আমাদের পরস্পরের মধ্যে আস্থা,বিশ^াস ও ভ্রাতৃত্ববোধ স্থাপন করতে পারলে অস্ত্রের প্রয়োজন হবে না।বন্ধুত্ব, বিশ^াস,ভালোভাসা এবং জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের কাছে বন্ধুকের নল বাঁকা হয়ে যায়।জনশ্রুত বন্ধুকের নলের চাইতেও অনেক শক্তিশালি।বন্ধুক দিয়ে মানুষ হত্যা করা যায়,সমস্যার সমাধান করা যায়না।তিনি বলেন,ধর্ম,বর্ণ,জাতি,গোষ্টির নামে আর কোনো হিংসা,বিদ্বেষ কিংবা হানাহানি নয়।পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি সকল সম্প্রদায় আমরা বাংলাদেশের মানুষ,আমরা বাংলাদেশী।সকলের মধ্যে বন্ধুত্ব,বিশ্বাস-ভালোবাসা অর্জন করতে হবে।সকলে মিলেমিশে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকলে পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অবারিত সম্পদ ও সম্ভাবনার স্থান।প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার সঠিকভাবে ব্যবহার করে যেন এখানকার মানুষেরা যাতে করে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে না পারে,সেজন্য ষড়যন্ত্র চলছে।তাঁরা চেয়েছিল পার্বত্য অঞ্চল বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে।
পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের দুর্বিষহ শাসনের কঠোর সমালোচনা করে ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন,পতিত সরকার মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে ছিলো,মানুষকে খুন,গুম করেছে।আন্দোলন করতে গিয়ে আমরা অনেক দেশ প্রেমিক নেতাকর্মীকে হারিয়েছি।শিশুসহ নিষ্পাপ শিক্ষার্থীদের হত্যা করতে স্বৈরাচারী হাসিনার সরকারের হাত কাঁপেনি।পুলিশ,গুন্ডা-পান্ডা আর প্রশাসন দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছে।ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ফলে অত্যাচারী,জুলুমকারীরা লজ্জাজনকভাবে পালিয়ে গেছে।যা ইতিহাসের নজিরবিহীন ঘটনা।তিনি বলেন,বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে নয়,শান্তির রাজনীতিতে বিশ্বাস করে।বিএনপি মনে করে,জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস,আমাদের শক্তির উৎস জনগন। তিনি বিএনপির সরকারের আমলে পাহাড়ের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন,পাহাড়ের মানুষকে অথনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে আমরা সকল ধরনের কর্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি।আগামীর নির্বাচন খুবই কঠিন উল্লেখ্য করে তিনি বলেন,জনগনের ভোটের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে ইনশাআল্লাহ।সে জন্য,অপদে-বিপদে জনগনের পাশে থেকে জনগনের আস্থা অর্জনের জন্য নেতাকর্মীদের আহবান জানান তিনি।তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন,জনগনের কারো সাথে কোনো রকমের অন্যায়,আচরণ করলে দল,তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গুইমারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো: সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশাল এই সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রবীন চন্দ্র চাকমা, সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার, যুগ্ম সম্পাদক এড. মালেক মিন্টু, মোশাররফ হোসেন, অনিমেষ চাকমা রিংকু, সাংগঠনিক সম্পাদক আঃ রব রাজা প্রমুখ।এছাড়া জেলা-উপজেলা থেকে আগত বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।