
স্বাস্থ্য মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সূচকহিসেবে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত।বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির মুল উদ্দেশ্য সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও জরুরি চিকিৎসা সেবার প্রাপ্যতা নিঞ্চিত করা।সংবিধান অনুযায়ী ও আন্তর্জাতিক সনদসমুহ অনুসারে চিকিৎসাকে অধিকার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা।সমতার ভিত্তিতে সেবাগ্রহীতাদের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবায় অভিগম্যতা বৃদ্ধি করা,জনগনের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় কমিয়ে আনা এবং বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য ব্যয় হতে জরগনকে সুরক্ষা দেওয়া ইত্যাদি। চিকিৎসাসেবা এবং জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধন রাষ্টের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলেও খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার প্রায় ৮০ হাজার মানুষ সার্বজনীন এ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত।উপজেলা স্বীকৃতির দশ বছরেও উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় নির্মিত হয়নি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নেই কোনো সরকারি হাসপাতাল।গড়ে ওঠেনি আধুনিক মানসম্পন্ন কোনো বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তাই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত গুইমারা উপজেলার ৩ টি ইউনিয়নের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। বাধ্য হয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে হচ্ছে গ্রাম্য হাতুরী ডাক্তারদের।এতে করে একদিকে ভোগান্তি,অন্যদিকে সময় ও অর্থ ব্যয় করেও অন্যতম চাহিদা মানসম্মত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না এ উপজেলার জনগণ। রোগ নির্ণয় ও আধুনিক মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিতে হলে যেতে হয় পার্শ্ববর্তী উপজেলায় নতুবা জেলাশহর হাসপাতালে,আর না হয় ১০০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম শহরে। উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স না থাকায় প্রসবকালীন সময়ে অক্সিজেন সাপোর্ট না পেয়ে ২০১৭ সালে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিলের ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে।গত ২০ এপ্রিল স্থানীয় বাসিন্দা আবু তৈয়বের একমাত্র সন্তান অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুবরণ করে। এ দুটি ঘটনা উপজেলার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে,চরমভাবে ক্ষুব্ধ করেছে মানুষকে। না জানি আবারো চিকিৎসার অভাবে কোনো মায়ের বুক খালি হয়।
বিজ্ঞানের উৎকর্ষের এ যুগে সবচেয়ে বড় দুর্ভোগে পড়তে হয় দুর্গম পাহাড়ি গ্রামের গর্ভবতী মহিলাদের নিয়ে। নিজ উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় প্রায় প্রতিটি ডেলিভারিতে যেতে হয় মানিকছড়ি অথবা মাটিরাঙ্গা উপজেলায়। এছাড়া গুরুতর অসুস্থ্য রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয় । স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত গুইমারা উপজেলার ৮০ হাজার মানুষের অপুষ্টি ও নানা রোগে ভোগান্তির শেষ নেই।
ভোগান্তির বিষয়ে গুইমারা উপজেলার সাইংগুলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তৈকর্মা মৌজার মৌজা প্রধান চাইথোয়াই চৌধুরী বলেন, হাসপাতাল না থাকায় বিশেষ করে গহীন পাহাড়ি গ্রামের মানুষ সুচিকিৎসা পাচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে হাতুরী ডাক্তার ও কবিরাজ নির্ভর হয়ে পড়ে যার কারণে পাহাড়ি জনগন আধুনিক মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা থেকে অনেক দূরে আছে তাই দ্রুত গুইমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপনের দাবী জানান তিনি। এ বিষয়ে গুইমারা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক হাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা খোরশেদ আলম বলেন, হাসপাতাল না থাকায় গুইমারাবাসী আদিযুগে বসবাস করছে। তিনি বলেন এযুগে এসে রোগ নির্ণয় করতে গেলেও আমরা ঢাকা চট্রগ্রাম যেতে হয় না রোগ নিয়েই থাকতে হয়। সরকারি হাসপাতাল অত্যান্ত জরুরী।
২নং হাফছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অংগ্যজাই মারমা বলেন,গুইমারা উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১০ বছর হয়ে গেছে কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্বাস্থ্যসেবা এখনো নাজুক অবস্থা যা উপজেলাবাসীর সবচেয়ে কষ্টের। তিনি আরো বলেন,গুইমারার ৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ঘম হলো সিন্ধুকছড়ি ইউনিয়ন সেটি বিবেচনা করে মধ্যবর্তী ইউনিয়নে হাসপাতাল স্থাপনের দাবীও রাখেন তিনি।
গুইমারা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এস এম মিলন বলেন,গুইমারাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় দরিদ্র পীড়িত গুইমারা উপজেলাবাসী প্রয়োজনীয় স্বস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।মুমুর্ষু রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই অকাল মৃত্যু হয়ে থাকে। উন্নত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদস হাসপাতাল অথবা চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া আর অন্য কোনো গত্যন্তর নাই। ফলে আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষ গুলো ক্রমশ ধুকে ধুকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।এমতাবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে গুইমারাতে একটি আধুনিক মানসম্মত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি ।
খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন ডা. মো. ছাবের জানান, উপজেলা প্রশাসনের চাহিদার নথি অনুযায়ী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নির্মাণে সিভিল সার্জন অফিসের চুড়ান্ত কাগজপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবরে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন স্বাপেক্ষে নির্মাণ শাখা কাজ শুরু করবে। তিনি আরো জানান,নির্মাণ শাখা পিপি অনুমোদনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন,তবে বর্তমান সরকার তা অনুমোদন করবে কিনা সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি আশা করেন,গুইমারা উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সের কাজ দ্রু শুরু হবে।
জীবনের জন্য সবচেয়ে দরকারি মৌলিক অধিকার চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত গুইমারাবাসীর সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে অতিদ্রুত গুইমারা উপজেলা আধুনিক এবং মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণে বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করেছেন গুইমারাবাসী।জনগণের প্রত্যাশা,রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক চিকিৎসার চাহিদা পূরণে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য যে ২০১৪ সালের ৬ জুন প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার)১০৯তম সভায় খাগড়াছড়ির নবম উপজেলা হিসেবে গুইমারাকে অনুমোদন দেওয়া হয়।