কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শীলখালী এলাকার ইয়াবা ডন সোনা আলী মেম্বার ও বাঘ সামশু বাহিনীর হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মৃত জাফর আলমের ছেলে আহত সলিম উল্লাহ বাদী হয়ে সামশুদ্দীন প্রকাশ বাঘ সামসুর ছেলে হেলাল উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত নামা ৩/৪ জনকে আসামী করা হয়। টেকনাফ থানার মামলা নং-২২, জিআর মামলা নং-৪০৩। তাং-৮/৫/২০২০ইং।
মামলার আসামীরা হচ্ছে,উত্তর শীলখালী এলাকার সামশুদ্দীন আহমদ প্রকাশ বাঘ সামশুর ছেলে হেলাল উদ্দিন, একই এলাকার সোনা আলীর ছেলে ফায়সাল, ছেলে হেলাল উদ্দিন, আবুল হোসনের ছেলে রহিম উল্লাহ, মৃত আবু বকরের ছেলে সামশুদ্দীন আহমেদ প্রকাশ বাঘ সামশু, তার ভাই মো.আলম, সামশুদ্দীন আহমেদ প্রকাশ বাঘ সামশু স্ত্রী আনোয়ারা বেগম মেম্বার, মো.হাশীমের ছেলে আবদুর রহমান, আবুল হোসনের ছেলে লুৎফুর রহমান, আবুল হোসনের ছেলে মো.সোনা আলী মেম্বার ও আব্বাসের ছেলে মো.ইসা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে। আহত ছাত্র দুই সহোদর । মাগরিবের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পরপরই এই হামলার শিকার হন তারা। আহতদের টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে,গত ৭ মে বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর বাহারছড়া উত্তর শীল খালী এলাকার মৃত জাফর আলমের দুই ছেলে সলিম উল্লাহ ও আজিজ উল্লাহ পাশ্ববর্তী মসজিদে মাগরিবের নামাজ শেষ করে বের হন। মসজিদ থেকে বের হওয়ায় সাথে সাথেই স্থানীয় ইয়াবা ডন খ্যাত সোনালী মেম্বারের নেতৃত্বে ১০/১২ জন দুবৃত্ত তাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং এলোপাতাড়ি মারধর ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। সোনালী মেম্বার হচ্ছে আত্মস্বীকৃত ও আত্মসমর্পনকারী ইয়াবা ব্যবসায়ী মো. আবু ছৈয়দ এর বাবা এবং সামশুদ্দীন আহমেদ প্রকাশ বাঘ সামশু মানবপাচার সহ বিভিন্ন মামলার আসামী।
আহতরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সেলিম উল্লাহ ও তার বড় ভাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ইতিহাস বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজ উল্লাহ। স্থানীয় লোকজন আহত দুই সহোদরকে উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
আহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আজিজ উল্লাহ জানান, মসজিদে নামাজ পড়ে বাহিরে বের হওয়ার পরপরই কিছু বুঝে উঠার আগে ধারালো দা, ছুরি ও ইট নিয়ে সোনালী মেম্বারের নেতৃত্বে তার রহিম উল্লাহ, হেলাল উদ্দিন, ফায়সালসহ ৭/৮ জন তাদের উপর হামলা করে।
তিনি আরো জানান, আমাদের স্বত্ত্ব দখলীয় জমির উপর দিয়ে জোর করে সোনালী মেম্বার প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত একটি রাস্তা নির্মাণ করেছে। এনিয়ে প্রতিবাদ করায় এবং সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে সরকারী ত্রাণ চুরির বিষয়ে কথা বলার জের ধরে ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিত ভাবে এই হামলার ঘটনাটি ঘটিয়েছে। ঘটনাটি টেকনাফ থানার ওসিকে জানানোর পরপর বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় তিনজনকে। আটককৃতরা হলো, হেলাল উদ্দিন, মো.আলম ও মো.ইসা।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, আটককৃত তিন আসামীকে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, শীলখালীর সোনালী মেম্বার, তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজব আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারী।
সোনা আলী মেম্বারের ছেলে মো. আবু ছৈয়দসহ ১০২ জন তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি ২০১৯ সালের ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে ওই দিনই দুটি মামলায় আটক দেখিয়ে আত্মসমর্পণকারীদের কক্সবাজার কারাগারে পাঠানো হয়।
১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ীর মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই টেকনাফের বাসিন্দা : আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা কারবারির বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। গত ২০ জানুয়ারি কক্সবাজার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহ এর আদালতে পুলিশ এ চার্জশিট জমা দেন। সোনালী মেম্বারের ছেলে মো. আবু ছৈয়দ কারাগারে থাকলেও পিতা সোনালী এবং তার আত্মীয় স্বজনেরা ইয়াবা কারবার অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ।
সামশুদ্দীন আহমেদ প্রকাশ বাঘ শামশুর বিরুদ্ধে মানবপাচার মামলা গুলো হচ্ছে, টেকনাফ থানার জিআর-৫৮৩/১১, কক্সবাজার সদর মডেল থানার জিআর-৯৯৫/২০১৪, টেকনাফ থানার জিআর-২১৬/১৩, রামু থানার জিআর-২৬২/১৪, কক্সবাজার সদর থানার জিআর-৪১/১৫, টেকনাফ থানা মামলা নং- ১৯/১৪। এসব মানবপাচার মামলা,টেকনাফ থানার অপহরণ মামলা নং ২৩/১৪।
বাঘ শামশু ওই এলাকার বার্মাইয়া মহিলা মানোয়ারাকে ভোটার করেন। তার স্বামী গুটি বশর। যার অনেক ইয়াবা মামলা আছে এবং বাঘ শামশুর পার্টনার তাকেও ভোটার করেছিল।
মহিলা মেম্বার আনোয়ারা বেগম, যিনি ২০১৩ সালে নিজের একমাত্র ছেলেকে চট্রগ্রাম নিয়ে লুকিয়ে রেখে নিরীহ লোকজনকে হয়রানি করতে চেয়েছিল। যা তদন্ত শেষে বাদির বিরুদ্ধ মামলা করতে পুলিশ কোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছিল।
Please follow and like us: