রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে পাথর বোঝাই ট্রাকচাপায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাবি অভ্যান্তরে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম মাহমুদ হাবিব হিমেল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের (২০১৭-২০১৮) শিক্ষার্থী। এছাড়া তিনি শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক ছাত্র। হিমেল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও রায়হান নামের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।
শিক্ষার্থী নিহত হওয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা পাথর বোঝাই ট্রাকটিতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এরপর রাত সাড়ে ১১ টার সময়ও রাবি মেইন গেইটে শিক্ষাথীরা অবস্থান নেয় এবং মহাসড়কে আগুন জ¦ালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তার ভিসির বিরুদ্ধে নানা ধরনের শ্লোগান দিতে থাকেন। এ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে ।
এদিকে ট্রাকচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের ৫টি ট্রাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ঘটনাস্থলে গেলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রক্টর সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে বিক্ষুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়।
পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা ভিসির ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এসময় পুলিশ সেখানে গেলে পুলিশের পিছনে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে মেইনগেটের সামনে অবস্থান করছে।
রাতে সাড়ে ১১ টার দিকে শিক্ষার্থীরা মেয়েদের হলে তালা লাগানোর অভিযোগে সেখানে গিয়ে তারা তালা ভেঙে চলে আসে। তারা মেইনগেটের সামনে রাস্তা অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুটি আবাসিক হল নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি হল নির্মাণ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের সামনে। অন্যটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের পাশে। এই দুটি হল নির্মাণ করতে বেশ কয়েকটি ট্রাকযোগে নির্মাণ সামগ্রী আনা-নেয়ার কাজ করা হচ্ছে। নিহত হিমেল মোটরসাইকেলযোগে ক্যাম্পাস থেকে হলে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নির্মাণ সামগ্রীবাহী একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এই দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষার্থীদের দাবি বড় বড় মঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ চলছে রাবিতে। এতে রাস্তা ভেঙ্গে একাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু রাস্তা মেরামত বা রাস্তা প্রসস্তকরণের কোন উদ্যোগ নেয়নি রাবি কতৃপক্ষ। তারা আরো বলেন সেই পুরোনো আমলের সরু রাস্তা গুলি আজও সরুই থেকে গেছে। কিন্তু প্রায় ১২ মাসই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বড় বড় ট্রাক রাবিতে নির্মান সামগ্রী বহন করে আনা নেয়া করে। শিক্ষার্থীদের দাবি যদি রাস্তা খান খন্দনে ভরা না থাকতো। আর রাস্তার প্রসস্ত করে হল নির্মানের কাজ করতো তাহলে সড়ক দূর্ঘটনা ঘটতো না। শিক্ষার্থীও মারা যেতো না।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লিয়াকত আলী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ভবন নির্মাণ কাজ হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মামামাল আনা-নেয়ার জন্য কয়েকটি ট্রাক কাজ করছে। এর মধ্যে একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ওই শিক্ষার্থী মারা যান।
মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন তুহিন বলেন, পুরো আরএমপি’র সিনিয়র কর্মকর্তারা রাবিতে অবস্থান করছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে তৎপর রয়েছে বলেও জানান ওসি।