
দীর্ঘ ১৯ বছর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদিআরবে চাকরি করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখেও রেমিটেন্সযোদ্ধা মোহাম্মদ সামছু এখন ভুমিহীন। তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের মরহুম আলী আহমেদের পুত্র। নিজস্ব জায়গা ও বসতঘর না থাকায় কখনো মসজিদে, কখনো আত্মীয় স্বজনের বাড়ি আবার কখনো ছেলের চা-দোকানেই তার দিন-রাত কাটে। ভুমিহীন রেমিটেন্সযোদ্ধা সামছুকে সরকারিভাবে একটি ঘর উপহার দেয়ার জন্য প্রবাসী রেমিটেন্সযোদ্ধা ও এলাকাবাসী উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোরদাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিষ্ণপুর গ্রামের মোহাম্মদ সামছু ২০০২ সালে বসতবাড়ির ৩ গন্ডা জায়গা ফুফাতো ভাই আবু’র নিকট ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ওই টাকা ও আরো কিছু টাকা সুদের উপর নিয়ে তিনি জীবিকার তাগিদে সৌদিআরব পাড়ি জমান। সেখানে সামান্য বেতনের চাকরি করতেন। বেতনের টাকা সংসারের খরচের জন্য দেশে পাঠাতেন। সেই টাকা তাঁর স্ত্রী নেরু বেগম মানুষের থেকে নেয়া সুদের টাকা পরিশোধ ও সংসারের ভরণ পোষণের কাজে খরচ করেছেন। মোহাম্মদ সামছুর পরিবারে ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে ছিল। নেরু বেগম কোনরকম ভাবে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলেও বিয়ে করেছে। সংসারের খরচ সামাল দেয়ার পর কোন টাকাই অবশিষ্ট না থাকায় কিনতে পারেনি বাড়ির জন্য কোন জায়গা। গত ৩ বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নেরু বেগমের মৃত্যু হয়। দুই বছর আগে দেশে ফিরে আসেন রেমিটেন্সযোদ্ধা মোহাম্মদ সামছু। বসতঘর বা বাড়ি না থাকায় তিনি কখনো মসজিদে, কখনো আত্মীয় স্বজনের বাড়ি আবার কখনো ছেলের চা-দোকানেই জীবন অতিবাহিত করছেন। বর্তমান সময়ে এমন করুন কাহিনী কেউ স্বচোক্ষে না দেখলে বিশ^াস করবে না। ঘর-বাড়ির জায়গা বিক্রি করে কেউ বিদেশ যায়?-এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রবাসী রেমিটেন্সযোদ্ধা মোহাম্মদ সামছু বলেন, ওই সময় অর্থনৈতিক অবস্থা দূর্বল ছিল। মনে করেছি, ঘর-বাড়ির জায়গা বিক্রি করে বিদেশ গিয়ে উপার্জন করে পরে জায়গা কিনে আরও ভালোভাবে ঘর নির্মাণ করবো। কিন্তু সেই স্বপ্ন ২২ বছরেও পূরণ হয়নি। এখন বয়সও শেষ, কাজ করার শক্তিও নাই। সরকার আমার সহযোগিতায় এগিয়ে আসলে কতৃজ্ঞ থাকবো। মোহাম্মদ সামছুর বড় ছেলে মোহাম্মদ সোহেল বলেন, বাবা যা উপার্জন করেছেন, সে টাকা দিয়ে কোন রকম সংসার চলেছে। মা আমরা ২ ভাই ও ৩ বোনের জন্য খরচ করেছেন। আমাদেরকে কখনো কষ্ট বুঝতে দেননি। বাবা বিদেশ থেকে আসার সময় গাড়ি ভাড়াও ছিল না। নতুন জায়গা কিনে ঘর নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত টাকা বাবা বা আমাদের নেই। তিনি আরও বলেন, দুই বছর আগে আমার চা-দোকান ব্যবসায় অনেক লোকসান হয়েছে। সুদে টাকা নিয়ে এখন আমিও স্বর্বশান্ত। বর্তমানে বিষ্ণপুর বটতলায় একটি ছোট চা-দোকান দিয়ে কোনরকম টিকে রয়েছি। থাকার জন্য নিজস্ব কোন সম্পত্তি বা ঘর না থাকায় পাশের একটি বাড়িতে সামান্য ভাড়ায় ফ্যামিলি নিয়ে থাকছি। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা পেলে আশা করি আমাদের কষ্ট শেষ হয়ে যাবে। চৌদ্দগ্রাম প্রবাসী সূর্য সন্তান সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘সরকার মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভুমিহীনদের মাঝে ঘর উপহার দিয়েছে। সরকারের উচিত প্রবাসী রেমিটেন্সযোদ্ধা মোহাম্মদ সামছুকে একটি ঘর উপহার দেয়া। এতে তাঁর দুঃখ কিছুটা হলেও কমে যাবে’। এদিকে দেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখা ভুমিহীন রেমিটেন্সযোদ্ধা মোহাম্মদ সামছুকে একটি ঘর উপহার দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী ও প্রবাসী রেমিটেন্সযোদ্ধা।