মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি-
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজায় এবার অন্যরকম এক ইতিহাস গড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রাচীন যুগ থেকেই পূজা-পার্বণে পুরুষের আধিপত্য। পূজার পৌরোহিত্য করে থাকেন ব্রাহ্মণ পুরুষেরাই। নারীরা বাকি সব কাজে অংশগ্রহণ করলেও পুরোহিতের কাজে তাদের দেখা পাওয়া বিরল ঘটনা। এবার সেই বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে প্রতি বছর দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পূজা পালন করা হয়েছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩৭টি মন্ডপে সরস্বতী পূজা উদযাপন হচ্ছে। এর মধ্যে ইংরেজি বিভাগের পূজাতে পুরোহিত ছিলেন একই বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সমাদৃতা ভৌমিক।
সমাদৃতা ভৌমিক বলেন, ‘আমাদের সনাতন শাস্ত্রমতে কোথাও বলা নেই যে নারী পুরোহিত পৌরোহিত্য করতে পারবে না। তবে সমাজের সম্মানীয় কাজগুলো এখনও পুরুষদের দখলে। একারণে নারী পুরোহিতদের কটূ দৃষ্টিতে দেখা হয়। তবে আমার বিভাগের শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহে আমি পৌরোহিত্য করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি।’
অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সমাদৃতা বলেন, ‘পুরুষ ডমিনেশনের বিপক্ষে পৌরোহিত্য করে প্রমাণ করেছি নারীরাও পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে এবারই প্রথম নারী পুরোহিত কোনো পূজা সম্পন্ন করলো। আমরা তাকে সাধুবাদ ও ধন্যবাদ জানিয়েছি। নারী পুরোহিতদের আমরা স্বাগত জানাই।’
এদিন ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় পূজার আয়োজন করা হয়। এবার ৩৩টি বিভাগ, ২টি ইনস্টিটিউট এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩৬টি পূজামন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজেও পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার সকালে বিদ্যাদেবী সরস্বতীর বন্দনায় ঢাকঢোল, কাঁসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বাণী অর্চনা শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন।
এসময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত সরস্বতী পূজায় অন্যান্য বছরের মতো এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে উপাচার্যের সভাকক্ষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ূন কবীর চৌধুরী, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ড. রবীন্দ্রনাথ মন্ডল, সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. সুরঞ্জন কুমার দাস, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল, অর্থ ও হিসাব পরিচালক ড. মো. মহসীন রেজা, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন সহ অন্যান্যরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন।
Please follow and like us: