২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

শিরোনামঃ-
  • হোম
  • দেশজুড়ে
  • বিএনপি নেতা শওকত হত্যা মামলা- জড়িতদের বিচার ও বহিষ্কারের দাবি বিএনপি নেতাকর্মীদের 




বিএনপি নেতা শওকত হত্যা মামলা- জড়িতদের বিচার ও বহিষ্কারের দাবি বিএনপি নেতাকর্মীদের 

কামরুজ্জামান শিমুল, বাগেরহাট জেলা করেসপন্ডেন্ট।

আপডেট টাইম : মে ০৩ ২০২৫, ২১:১২ | 633 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শেখ শওকত হোসেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত বিএনপি নেতাকর্মীদের ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি- বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। মৃত্যুর পরে বিএনপি’র পক্ষ থেকে কোন শোকবার্তা প্রকাশ না করায় এবং জেলা উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি নেতৃবৃন্দ খোঁজখবর না নেওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং জেলা বিএনপি’র প্রভাবশালী এক নেতার আশীর্বাদ পুষ্ট হওয়ায় প্রকাশ্যে ঘুরে আবারো হত্যার হুমকি দিতেছে বলে জানান পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
 গত ১১ই ফেব্রুয়ারী  বেলা বারোটায় বাগেরহাট শহর থেকে ধোপাখালি বাড়িতে ফেরার পথে দেপাড়া নামক বাজারে শেখ শওকত হোসেন ও তার সাথে থাকা বিএনপি সমর্থকদের উপর আতর্কিত হামলা চালিয়ে ১৫ -২০ জনকে আহত করে বিএনপি নেতা আফজাল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। স্থানীয়রা আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে বাগেরহাট ও খুলনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে। এঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে শওকত হোসেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং আরেক ভাই বিএনপি নেতা লিয়াকাত হোসেন বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শওকত হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ওইদিনই তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি বেসরকারি হসপিটালে মৃত্যুবরণ করেন বিএনপি নেতা শওকত হোসেন।
মৃতদেহ ঢাকা থেকে এনে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তার নিজস্ব বাড়িতে দাফন করা হয়। নব-নির্বাচিত ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের জানাজায় জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কাউকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় নাই। মৃত্যুর এতদিন পার হয়ে গেলেও জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়নাই। খোঁজখবর নেয়নি শোক সন্তপ্ত পরিবারের। হত্যাকাণ্ডে জড়িত বিএনপি নেতা আফজাল হোসেন ও তার বাহিনীর সদস্যরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়ে ” একটা মেরেছি বেশি বাড়াবাড়ি করলে আরেকটা হত্যা করা হবে” বলে হুমকি প্রদান করছে। জেলা বিএনপি’র এক নেতার আশীর্বাদ পুষ্ট হওয়ায় আফজাল ও তার বাহিনী ওই এলাকায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
স্থানীয়রা জানান, শওকাত হোসেন হত্যাকাণ্ডের পর ৬ মার্চ বিএনপি নেতা আফজাল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক আরো ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে নিহতের ভাই বিএনপি নেতা লিয়াকাত হোসেন বাগেরহাট সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ৫ই আগস্টের পর এলাকায় চাঁদাবাজি দখলবাজি সালিশ বিচার সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন বিএনপি নেতা আফজাল ও তার বাহিনী। সে সময় থেকে তার বিরুদ্ধে বাগেরহাট জেলা বিএনপি নেতাদের কাছে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েও কোন বিচার পাইনি ভুক্তভোগীরা। শুরুতেই আফজাল ও তার বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি বলে তাদের হাতে খুন হতে হয়েছে বিএনপি নেতা শওকত হোসেনকে। আফজাল হোসেন ও তার বাহিনী দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
নিহতের ভাই বিএনপি নেতা লিয়াকত হোসেন জানান, ঘটনার দিন ভাইকে নিয়ে বাগেরহাট শহর থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। দেপাড়া বাজারে পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা আফজাল ও তার বাহিনী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের উপর হামলা করে। হামলায় আমি আমার ভাই শওকত হোসেন সহ ১৫ – ২০ জন আহত হই। আহত শওকাতকে প্রথমে বাগেরহাট পরে খুলনা এবং অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরবর্তীতে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। ১০ দিন চিকিৎসার পর সে মৃত্যুবরণ করে। সে ধোপাখালি ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। অথচ তার মৃত্যুর পরে বিএনপির পক্ষ থেকে কোন  শোকবার্তা জানানো হয়নাই। সমবেদনা জানানো হয়নি শোকাহত পরিবারের প্রতি। ঘাতক আফজাল ও তার বাহিনী হত্যার জন্য আমাদেরকেও হুমকি প্রদান করছে। জেলা বিএনপি’র এক নেতার আশীর্বাদে সে এলাকায় চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী করে এলাকাকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। দলের নাম ভাঙাচ্ছে। এসব প্রতিবাদ করার কারণে আমার ভাইকে হত্যা করল অথচ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না এটা দুঃখজনক। কার ইশারায় কোন শক্তির বলে সে শাস্তির পরিবর্তে পুরস্কৃত হচ্ছে আমরা জানিনা। তার শাস্তি না হলে ভবিষ্যতের রাজনীতিতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে শওকত হত্যার বিষয়টি।
বাগেরহাট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম রসুল তরফদার নেওয়াজ বলেন, নিহত শওকত হোসেনের পরিবার সম্পূর্ণ একটি বিএনপি পরিবার। তার এক ভাই ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ছিলেন। কয়েক বছর আগে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে মৃত্যুবরণ করেন। শওকত হোসেনকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হলো। আরেক ভাই লিয়াকাত হোসেন ধোপাখালী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি পদপ্রার্থী। তাকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে শওকত হত্যা মামলার আসামিদের সুযোগ প্রদান করায় আমরা অবাক হয়েছি। এই সিদ্ধান্ত কোথা থেকে কিভাবে এলো জানিনা। বিএনপি নেতার রক্ত শুকানোর আগেই তার হত্যাকারীদের দলে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে। এখনো সুযোগ আছে। নেতাকর্মীদের রক্তের সাথে বেইমানি নয় মূল্যায়ন চাই।
কচুয়া উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কিছুদিনের মধ্যেই নিজ দলের কর্মীদের হামলার শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন শওকাত হোসেন। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটির তদন্তে বিএনপি নেতা আফজাল হোসেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে এখনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই। সে কারণে স্থানীয় বিএনপি কর্মী সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ রয়েছে। ৫ই আগস্ট এর পরে আফজাল হোসেন ও তার লোকজনের নামে অসংগঠনিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পেয়েছি। আশা করব অতি দ্রুত বাগেরহাট জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বাগেরহাট জেলা বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম খান বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে আফজাল হোসেন ও তার বাহিনীর হামলায় ওয়ার্ড বিএনপির নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন হত্যাকান্ড ঘটেছে। এই হত্যা মামলার আসামিকে ইউনিয়ন বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া মানে হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করা। এই হত্যাকাণ্ডের পরে জেলা বিএনপি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। কয়েক মাস বসে যে তদন্ত রিপোর্ট তারা দিয়েছে এই তদন্ত রিপোর্ট নিয়েও বিতর্ক আছে। তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন সুতোর টানে  তাকে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিষয়টি জেলা বিএনপির আহবায়ক, সদস্য সচিব এবং নির্বাচন পরিচালনা মনিটরিং টিমের প্রধান ও সদস্যদেরকে জানিয়েছি। দলের বৃহত্তর স্বার্থে নিশ্চয়ই ভালো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তারা।
জানতে চাইলে নির্বাচন মনিটরিং টিম প্রধান বিএনপি নেতা লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ধোপাখালি ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা শওকত হোসেন মৃত্যুর পর জেলা বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা, ব্যারিস্টার শেখ মোঃ জাকির হোসেন ও এডভোকেট মিজানুর রহমানের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেয়ে জেলা বিএনপির আহবায়ক সদস্য সচিব সমন্বয়ক সহ তদন্তকারী তিন নেতাকে নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। আমি শুধু নির্বাচন মনিটরিংয়ের দায়িত্বে আছি। সিদ্ধান্ত দিবে বাগেরহাট জেলা বিএনপি।
বিষয়টি সম্বন্ধে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, বিএনপি নেতা শওকত হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। অভিযুক্ত আফজালকে দ্রুত নোটিশ পাঠানোর পরে তার জবাব পেলেই সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি- আলহাজ্ব আবদুল গফুর ভূঁইয়া,সাবেক সংসদ সদস্য, প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

 

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত।

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET