বিজয়ের পঞ্চাশ বছর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কলেজ পড়ুয়া মোছলেমা আক্তারের প্রায় ৬ মাস ধরে নিজ হাতে সুঁই-সুতোর ছোঁয়ায় বোনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আঁকা ছবি স্থানীয় এমপি অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতির মাধ্যমে উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। মোছলেমা আক্তারের দৃঢ় প্রত্যাশা ছিল এমনটিই। কলেজের টিফিন আর ঘর-গৃহস্থালী থেকে সংগৃহীত একটু-আধটু সঞ্চয়ের অর্থ দিয়ে কেনা রঙিন কাপড় আর নানা রংয়ের সুঁতোয় বোনা বঙ্গবন্ধুর ছবি উপহার দিবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এমন আশা পূরণ হওয়ায় মোসলেমা বেজায় খুশি। ছবি আঁকা তার পেশা নয়। খানিকটা সখেরবসে একটুখানি নেশা। আর এমন নেশার আবর্ত ঘিঁরেই বঙ্গবন্ধু’র মুখাবয়বের চিত্র আঁকা।শিক্ষার্থী জীবনের ধারাবাহিকতায় ছোট বেলা থেকেই আঁকা-আঁকির প্রতি তার নেশা মাথায় চেপে বসে।প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ছোঁয়ায় বিগত ২০০৯-১০ সাল শিশু বয়স থেকেই ছবি আঁকার প্রতি তার আগ্রহ।ইউটিউব,অনলাইন এবং অন্যের ডিজাইন দেখে ছবি আঁকার প্রতি তার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।তার ছবি আঁকার ক্যানভাস শুধুই বঙ্গবন্ধু।একটু-আধটু করেই তার ছবি আঁকার হাতে খরি।ছবি আঁকার প্রেক্ষাপটে এমনিভাবেই তার এগিয়ে চলা।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউপির প্রত্যন্ত পল্লী হরিনাথপুর গ্রামের কৃষক মো. মোকছেদুল মন্ডল ও গৃহিনী মোছা. শাহানারা বেগম দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে ছোট মোছা. মোছলেমা আক্তার। জন্ম ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি। তৃণমূল গ্রাম পর্যায়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ চুকিয়ে বাবা-মা’র সন্তান আর একমাত্র ভাইয়ের আদুরে বোন মোছলেমা আক্তার পলাশবাড়ী আদর্শ ডিগ্রী কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। একমাত্র বড় ভাই শামীম মন্ডল মাস্টার্স সম্পন্ন করে এখন বাড়ীতেই বেকার জীবন অতিবাহিত করছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতেই মোছলেমার এমন উদ্যোগ। এরআগে মৌসুমী ফল তরমুজের উপরিভাগে পেনসিল স্কেচ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি আঁকিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রেমি তথা এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মোছলেমা। মোছলেমা দেখেনি মহান স্বাধীনতার প্রাক্কালে পাকবাহিনীর নিষ্ঠুর ও বর্বরতা। দেখেনি রাজনীতির চড়াই-উৎরাই, সংকট কিংবা ক্রান্তিকাল। যা কিছু জেনেছেন পাঠ্যপুস্তুক, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন কলাম থেকে।
১৯৭১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছুই জানতেন না। বঙ্গবন্ধু’র জীবনপঞ্জি পড়ার মাধ্যমেই তার এসব জানা।
সর্বশেষ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি (মুজিব শতবর্ষ) সামনে রেখে পেন্সিল স্কেচের মাধ্যমে রঙিন কাপড়ের উপরিভাগে নানা রংয়ের সুঁতো দিয়ে নকশীকাঁথার আদলে মোছলেমা বঙ্গবন্ধু’র ছবি আঁকিয়েছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবা-মায়ের সাথে ঘর-গৃহস্থালী কাজে সহায়তার ফাঁকে একটু ফুসরত পেলেই বসে যান বঙ্গবন্ধু’র ছবি আঁকতে।
অন্যরকম এক ভাবনা থেকেই বঙ্গবন্ধু’র ছবি আঁকার প্রতি ঝোক মোছলেমার। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে মোছলেমার কোন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেই। বঙ্গবন্ধু’র আদর্শে আন্তরিক অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তার এ ছবি আঁকা যেন থেমে নেই। একের পর এক বঙ্গবন্ধু’র মুখাবয়বের ছবি আঁকা যেন তার নেশায় পরিণত হয়েছে। তার অদম্য বাসনা আজীবন যেন বঙ্গবন্ধু’র ছবি আঁকা চালিয়ে যেতে পারেন। পারিবারিক ভাবে মোছলেমার পরিবার দারিদ্র ক্লিষ্ট আবর্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নানামুখি অভাব-অটনের মধ্যে পরিবারটির প্রতিদিনের পথচলা। সম্বল বলতে মাত্র ৮ শতাংশের এক চিলতে ভিটেমাটি আর ২২ শতাংশ পরিমাণ কৃষি জমি। অন্যের জমিতে কাজ এবং চাষ করেই পরিবারটির যাবতীয় ভরণ-পোষণের সংস্থান হয়ে থাকে।
এদিকে; মোছলেমা আক্তারের বঙ্গবন্ধু’র ছবি আঁকার এমন প্রতিভার সন্ধান পান গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী- সাদুল্লাপুর) আসনের সংসদ সদস্য কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি। এমপি স্মৃতি বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকার বিষয়টি অবগত হয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়েন। মোছলেমাসহ তার পরিবারকে তিনি তাঁর পলাশবাড়ীস্থ নিজ বাসভবনে আমন্ত্রণ জানান সাক্ষাতের জন্য। সাক্ষাতকালে এসময় বঙ্গবন্ধু ভক্ত মোছলেমা আক্তারের পরিবার এমপি অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি’র প্রতি অনুরোধ জানান তাঁর মাধ্যমে ছবিটি যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেয়া হয়।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মোছলেমা তথা পরিবারটির ইচ্ছে পূরণ করতে সাংসদ স্মৃতি প্রতিশ্রুতি দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত নকশীকাঁথাটি তিনি উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে হস্তান্তর করবেন। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছবিটি হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।