রাজশাহীর পবা উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পদে পদে ঘুষ-দুর্নীতির কারণে এখানে অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। দালাল ছাড়া এখানে কোন কাজ হয় না এবং ঘুষ ছাড়া একটি ফাইলও নড়ে না। এতে করে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা।
সরজমিনে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে রামচন্দ্রপুর ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা আক্তার জাহানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, হয়রানি ও ঘুস বাণিজ্যের ভয়াবহ সব চিত্র। সেবা প্রার্থীদের অভিযোগ ঘুষ দিলে এই অফিসে কোন কাজেই অসাধ্য নয়। জমির বৈধ মালিক যেই হোক, চাহিদা মতো টাকা এবং দাগ খতিয়ান নম্বর দিলেই তা হয়ে যায় অন্যের। আবার বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ঘুসের রেটে হেরফের হলে প্রকৃত জমি মালিকদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।
আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় জমির নামজারি করায় বিপাকে জমির মালিক। দীর্ঘ ৪৫ বছরের ভোগদখলীয় জমি অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নামজারি করেছে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি ভূমি কর্মকর্তা এমন অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার নাইদুল ইসলাম। নাইদুল ইসলাম রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙ্গিরপাড়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে।
সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে এই অভিযোগ করেন। নাইদুলের দাবি, উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অবৈধভাবে জমিটির নতুনভাবে নামজারি করেছেন পবা উপজেলার রামচন্দ্রপুর ভূমি অফিসের সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মোসা: আখতার জাহান। এতে চরম হুমকির মধ্যে পড়েছি আমরা। কারন জমিটি নিয়ে সাংঘর্ষিক ঘটনা ঘটছে।
তিনি আরও জানান, ১৯৭৯ সালে একই এলাকার আফরোজা বিবি’র থেকে ১৭৯ নং কৈপুকুরিয়া মৌজায় তিনটি দাগে ২৫ শতক জমি কিনেছিলেন আমার পিতা আবুল কালাম আজাদ। যার দলিল নং- ১১৮৭১, আরএস খতিয়ান নং-২১ এবং দাগ নং ২, ৪ ও ৬। সে সময় আফরোজা বিবির ভাই আব্দুল আজিজ জমিটি সনাক্ত করে এক দাগে দিয়ে দেয় আমাদের। আমরা সেই অনুয়ায়ী জমির খাজনা খারিজ করে নিই। এরপর দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে জমিটি আমরা ভোগদখল করে আসছিলাম। ২০০৮ সালে ঐ জমিটি তিনটি দাগের মধ্যে দুই দাগের জমি বিক্রি করে দেয় আফরোজা বিবির ভাই আব্দুল আজিজ। পরবর্তীতে আমাদের দাগের জমিটিও অন্য আরেকজনের নিকট বিক্রয় করে আব্দুল আজিজ। এতে জমিটি নিয়ে ২০০৮ সালেই আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। মামলার কারনে আমরা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবর জমিটির হোল্ডিং বন্ধ করার আবেদন করি। এতে ততকালীন এসিল্যান্ড জমিটির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি কর্মকর্তাকে। এরপর সেই জমিটির নতুন ক্রেতা একই এলাকার মোজাহার আলীর সাত সন্তান মাইনুল গং আমাদের ভোগদখল ছেড়ে দিতে বলেন। অবশেষে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর পুলিশের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে সেই জমিটি তারা জবরদখল করেন এবং সেই জমিতে আমাদের গাছ লাগানো ছিল, সেখান থেকে অনেকগুলো গাছ কেটে নেয় তারা। বর্তমানে আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি এবং অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ভূমি অফিসের সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মোসা: আখতার জাহান যে, মামলাকৃত জমির নামজারি করেছেন তার বিচার দাবিতে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এমন অভিযোগ ব্যাপারে অভিযুক্ত ভূমি কর্মকর্তা মোসা: আখতার জাহানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি মামলার কাগজপত্র খেয়াল করিনি। এটি ভুল করে হয়ে গেছে। তবে নামজারি বাতিলের সুযোগ আছে। নামজারি বাতিলের আবেদন করলে এটি বাতিল হয়ে যাবে। এই নামজারি করে দিয়ে আপনি ৭০ হাজার টাকা সুবিধা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি সুম্পুর্ণ মিথ্যা। তবে আমার অফিসের বাইরে কেউ নিয়েছেন কিনা জানিনা। কাজ করতে গেলে একটু আধটু ভুল হবে, মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়।
একজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ব্যাপারে পবা উপজেলার জাহিদ হাসান জানান অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে সত্যতা পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।