বাবার মৃত্যুর পর থেকে প্রায় বাবার কবর জিয়ারত করতে যেতেন আহনাব আকিব অরন্য (১৮)। তার বাবা গত বছরের সেপ্টেম্বরে মারা যান।
আহনাব আকিব অরন্যেন ভাষ্য, গত শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে বাবার কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিলেন। ওই সময় পাশ দিয়ে একটি পুলিশের গাড়ি যাচ্ছিল। গাড়িটি সামনে গিয়ে আবার পেছনে ফিরে আসে। একটি ছবি দেখিয়ে সাধারণ পোশাকের এক পুলিশ জিজ্ঞাসা করেন, এটা কি তিনি ? হ্যাঁ বলতেই অরন্যের বড় ভাইয়ের সামনেই তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। কেন আমার পরিক্ষার্থী ছেলেকে গ্রেফতার করবে পুলিশ ?
অরন্য এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সে বাড়ির পাশে রাজশাহী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। অরন্য কাটাখালী থানার হরিয়ান এলাকার মৃত মোঃ রায়হান কবিরের ছেলে।
গত শনিবার নগরের মতিহার থানার একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সেদিন থেকেই তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে স্বজনদের কেউ এখন পর্যন্ত দেখা করতে পারেননি।
নগরের মতিহার থানায় বিস্ফোরক মামলাটি হয় গত ১৮ জুলাই। মামলার বাদী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ সাহাব উদ্দীন-আল-ফারুক। মামলার তদন্ত করছেন থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোঃ সাহাবুল ইসলাম। মামলায় ওই পরীক্ষার্থী-সহ এখন পর্যন্ত ৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার এজাহারে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এজাহারে অরন্যের নাম নেই।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ১৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা গেট থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেনের মাঝামাঝি আমবাগানে বিএনপি-জামায়াতের উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা একত্র হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে গেলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং পুলিশের ওপর ইটের টুকরা নিক্ষেপ করা হয়।
গ্রেপ্তার এইচএসসি পরিক্ষার্থী অরন্যের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বড় ভাই ও মাকে পাওয়া যায়।
অরন্যের মা মোছা. ছালমা রায়হান বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের ঘটনায় আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে আমার ছেলে রাবিতে যায়নি বা কোন প্রকার অন্দোলনের সাথে জড়িত নহে। গত শুক্রবারও সে তাঁর বাবার কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিলো। এ সময় পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেটা কোন দিন বাইরে থাকেনি। কি খাচ্ছে, কিভাবে আছে, কিছুই জানি না। ছোট মানুষ এমনিতেই খুব ভয় পায়। পরীক্ষা নিয়ে খুব টেনশনে থাকে। ছেলে বারবারই বলে, “মা, আমাকে ১৮ ঘণ্টা পড়তে হবে। না হলে ভালো ফলাফল হবে না। ভালো ফলাফল না হলে বুয়েটে পরীক্ষা দিতে পারব না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. সাহাবুল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে কাটাখালী থানার সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।