
শীতের হালকা হিমেল হাওয়ায় ছেলে-বুড়ো সবাই অধীর অপেক্ষা করপ কখন দিনের আলো শেষ হয়। সূয্যিমামা তার কাজ শেষে অস্ত যাবে। একটু অন্ধকার নেমে আসতেই সারা ইউরোপ আর আমেরিকায় শুরু হয়ে যায় ভূতের নৃত্য। পৃথিবীতে যত ভূতপ্রেত আছে, সবাই যেন এই রাতেই চলে আসে লোকালয়ে। বিভিন্ন রঙ বেরঙের ভূতুড়ে পোশাকে সজ্জিত এই সব জ্যান্ত ভূতেদের ট্রিট দিতে সকলেই যেন অস্থির।
আর এই ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি ‘হ্যালোইন উৎসব’ পালন করা হয় প্রতি বছর। ‘হ্যালোইন’ বা ‘হ্যালোউইন’ শব্দটি এসেছে স্কটিশ ভাষার শব্দ ‘অল হ্যালোজ’ ইভ থেকে। হ্যালোইন শব্দের অর্থ ‘শোধিত সন্ধ্যা বা পবিত্র সন্ধ্যা’। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে ‘হ্যালোজ’ ইভ’ শব্দটি এক সময় ‘হ্যালোইন’-এ রূপান্তরিত হয়।
প্রায় দুই হাজার বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সে বসবাস করতো কেল্টিক জাতি। নভেম্বরের প্রথম দিনটি তাদের নববর্ষ বা ‘সাহ-উইন’ হিসাবে পালন হতো। এই দিনটিকে তারা গ্রীষ্মের শেষ এবং অন্ধকারের বা শীতের শুরু মনে করতো। আর অক্টোবরের শেষ একটি দিনকে মনে করতো সবচেয়ে খারাপ রাত। যেই রাতে সকল প্রেতাত্মা ও অতৃপ্ত আত্মা তাদের মাঝে ফিরে আসে। যদি এদের সঙ্গে মানুষের দেখা হয় তবে সেই মানুষের ক্ষতি হতে পারে। আর তাই মানুষরা এই রাতে বিভিন্ন রকম ভূতের মুখোশ ও কাপড় পরে কাটাতো। আর রাতের বেলা আগুনের পাশে মুখোশ পরে বৃত্তাকারে একসঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে মন্ত্র বলা, নিজের পরিবার ছোট হলে অন্যের বাড়িতে থাকাসহ সামাজিক ভাবে একত্র হত। সময়ের পরিক্রমায় কেল্টিক জাতির এই ‘সাহ-উইন’ উৎসবই এখনকার দিনের ‘হ্যালোইন’ উৎসব।
ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ডে ৩১ অক্টোবর ‘হ্যালোইন উৎসব’ উপলক্ষে সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি নারী, পুরুষ ও শিশুরা ভৌতের সাজ সজ্জায় মেতে উঠে। এখানকার বিশেষ কর শিশুরা হ্যালোইন কস্টিউম যেমন ডাইনি, জলদস্যু, ভ্যাম্পায়ার, ষ্পাইডারম্যান, জম্বি ও ব্যাটম্যান পোষাক পরিধান করে। সন্ধ্যায় বাড়ির আঙ্গিনায় ভৌতিক আবহাওয়া আনার জন্য মাকড়সার কৃত্রিম জাল ও মিষ্টি কুমড়োর সব কিছু বের করা হয়। তারপর বিভিন্ন ভৌতিক ডিজাইন করে আলোক বাতি রাখা হয়। বাড়ির লাইট নিভিয়ে দিয়ে একটি ভৌতিক পরিবেশ আনা হয়। ভৌতিক পরিবেশে শিশুরা সন্ধ্যায় ব্যাগ নিয়ে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভয় দেখায় এবং বাড়ির মালিক শিশুদেরকে চকলেট দিয়ে বিদায় করেন। শিশুরা ব্যাগ ভর্তি চকলেট নিয়ে বাসায় ফেরে। এই একটি দিন নগর জীবনের ব্যস্ততা ও রাশভারী মানুষজন বাড়িতে নক করাকে কিছুই মনে করেন না। বরং উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করেন। কখন শিশুরা এসে তাঁদের ভয় দেখাবে।
বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের অনেকগুলো দেশে হ্যালোইন পালিত হয়। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, পুয়ের্তো রিকো, এবং যুক্তরাজ্য। এছাড়া এশিয়ার জাপানে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড হ্যালোইন পালিত হয়।
Please follow and like us: