ঈদকে সামনে রেখে দু’সপ্তাহ আগেই হাঁতুরী আর লোহার টুংটাং শব্দে মুখরিত থাকতো কামারশালাগুলো। কামারদের দম ফেলবার ফুসরত থাকতো না বিগত কোরবানির ঈদগুলোতে। দিন-রাত টুংটাং শব্দে মুখরিত থাকতো কামারশালা গুলো। কিন্তু এবারের আসন্ন ঈদে ভিন্ন চিত্র দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কামার পল্লী গুলোর, এবছর তাদের তেমন কর্মব্যস্ততা নেই বললেই চলে।
সরেজমিনে পৌর শহরের সুজাপুর, কামারপাড়া, কাঁটাবাড়ী,বেতদিঘী ইউনিয়নের মাদিলাহাট কামার পল্লীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগের মত কর্মব্যস্ততা নেই কামার পল্লীতে। সকল ব্যবসায়ীরা যেন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সময় পার করছেন। কয়েকটি কামারশালা খোলা থাকলেও নেই তেমন কাজের চাপ। ঈদকে ঘিরে নেই তাদের বাড়তি কোন প্রস্তুতিও। কিছুসংখ্যক কামারদের কাজ চললেও বিক্রি নেই বললেই চলে। অনেকে আবার আগে থেকেই দা, চাপাতি, ছুরি, চাকু বানিয়ে রাখছেন কোরবানীতে বিক্রির জন্য।
স্থানীয় কামারদের সুত্রে জানা যায়, প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুর গোশত কাটার জন্য প্রচুর দা, চাপাতি, কুড়াল ও ছুরি, চাকুর চাহিদা থাকে। এসব তৈরি করতে কামাররা বছরের এই সময় খুবই ব্যস্ত থাকেন। অথচ এবার কামার পাড়ায় বিক্রির তেমন কোন প্রভাব নেই।
পৌর শহরের কাঁটাবাড়ী কামারশালার পরিমল চন্দ্র রায়, কালি কান্ত রায়, কামার পাড়ার মানিক চন্দ্র রায়, সুজাপুরের সন্তোস রায় ও বিষ্ণু রায় জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে কোরবানির ঈদের তেমন কোন কাজ নেই। এবার লোহা ও কয়লার দাম অনেকগুন বেড়ে যাওয়ার কারনে আগের মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছেনা, তাই হয়তো ক্রেতারা আসছেননা।
সুজাপুর গ্রামের সন্তোষ রায় বলেন,দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতায় তিনি এমন কর্মহীন জীবণ আগে কখনই দেখেননি। নিয়মানুযায়ী এখন তার কাজের ব্যস্ততায় কথা বলার সময় থাকার কথা নয়। কিন্তু এবছর কি যে হয়েছে কোন ক্রেতাই নেই এখন পর্যন্ত। এসময় দোকানে পুরাতন ও নতুন ধারালো অস্ত্র বানানো ও মেরামত করার ভীড় জমতো,ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলতো এই ব্যস্ততা। কিন্তু বর্তমানে চিত্র একেবারেই উল্টো।
কাঁটাবাড়ী কাঠিহার ধার এলাকার পরিমল চন্দ্র রায় বলেন, কোরবানীর আর বাকী আছে মাত্র কয়েকদিন। অথচ এবার ক্রেতার কোন আনা গোনায় নেই। এবার ব্যবসার কি যে হবে বোঝা যাচ্ছে না।
সুজাপুর এলাকার কামার বিষ্ণু রায় বলেন, এখনও সময় আছে। অন্যান্য বছর আগে থেকেই ক্রেতারা দোকানে ভিড় করতো, এবার যেহেতু এখনও ঈদের এক সপ্তাহ বাকী,তাই ঈদের ২/৩ দিন আগে থেকে ব্যস্ততা বাড়তে পারে।