‘একদম ফেইল করাই দিমু’ হুমুকিসহ গভীর রাতে নানা অশ্লীল বার্তা ও ভিডিও পাঠিয়ে ছাত্রীদের মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। উপাচার্য বরাবর এই শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন আহমেদ ওরফে টোফেল।
অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মেসেঞ্জারে কুরুচিপূর্ণ বার্তা এবং ভিডিও পাঠানোর অভিযোগও করেছেন ওই শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী কিছু নারী শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো ম্যাসেজ ও ভিডিও কলের স্ক্রিনশর্ট অভিযোগ পত্রের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ পত্রে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, ‘কারুশিল্প ডিসিপ্লিনে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে প্রত্যেকটা ব্যাচের সব ব্যবহারিক ক্লাস ও মার্কিংয়ের দায়িত্ব একাই পালন করেন মনির উদ্দিন। ফলে বিভাগে তিনি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের ফেল করানোর হুমকি দিয়ে থাকেন। তিনি ক্লাসের সবার সামনে একাধিক নারী শিক্ষার্থীদের শরীরে আপত্তিকর স্থানে হাত দেন এবং অপ্রয়োজনে রাত বিরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও কল ও যৌন ইঙ্গিতমূলক ভাষা ব্যবহার করে ম্যাসেজ দেন।
এ ছাড়া শারীরিক গঠন নিয়ে বিভিন্ন অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য করে থাকেন।
এ ছাড়া পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিতেন বলে আভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী কিছু নারী শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো ম্যাসেজ ও ভিডিও কল দেওয়ার ডকুমেন্টস যাচাই করে দেখা যায়, ড. মনির ২০ জানুয়ারি এক ছাত্রীকে মেসেঞ্জারে একটি অশ্লীল ভিডিও পাঠিয়ে লিখেন, ‘এক্সট্রা ক্লাস চলিতাছে, বালা না?’ ২০২০ সালের ৯ জুলাইয়ে আরেক শিক্ষার্থীকে লিখেছিলেন, ‘রাত কিন্তু ৩টা ৫৪ বাজে, আমি করি চৌকিদার, আপনি কই?’। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে রাতে অন্য এক ছাত্রীকে একটি বাজে ছবি পাঠিয়ে বলেন, ‘এটা কি তুমি?’ এমন অনেক স্ক্রিনশর্ট রয়েছে।
নাম গোপন রাখার শর্তে ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, ‘আমি যখন প্রথম বর্ষে ভর্তি হই তখন তার টার্গেটের শিকার হই। তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাকে ফোন করে ব্যক্তিগত বিষয় হস্তক্ষেপ করতেন। এ ছাড়া শরীরের অঙ্গ, পোশাক এবং ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে যৌনতার ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলতেন। ’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ড. মনির উদ্দিনকে একাধিকবার একাধিক ফোট নম্বরে কল ও সাংবাদিক পরিচয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি।
জানতে চাইলে গ্রাফিক্স ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলা ইতিহাস বিভাগের সভাপতি ও চারুকলা অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘২২ সেপ্টেম্বর আমার কাছে ড. মনির উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ অনেক বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দেয় এবং তার বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করে তারা। বিভাগের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমি সেদিন বিকেলেই জরুরি একাডেমিক কমিটির মিটিং কল করি। সেখানে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। মিটিংয়ে কমিটির সবার পরামর্শে তাকে বিভাগের সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।’
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পত্রটি গ্রহণ করেছি। হয়তো ভিসি স্যারও পত্রটি পেয়েছেন। তবে কয়েকদিন ধরে ভিসি স্যার এতই ব্যস্ত যে এ বিষয়ে কথা বলার সময় পাননি। স্যারের থেকে কোনো নির্দেশনাও আমি পাইনি। স্যার এখন বাইরে আছেন। আগামী সপ্তাহে আমরা এ বিষয়ে একটা আপডেট জানাব।’