নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:- কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা।
বুধবার পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা সাক্ষাৎ করেন।
এর আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে এসেছেন বিএনপি নেতারা। ২৮ দিন ধরে কারাগারে তিনি। বিকেল তিনটার দিকে কারাগারে প্রবেশ করেন তারা।
অনুমতি সাপেক্ষে আজ দলটির ১০ নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।
তবে আজ বুধবার বিকেল তিনটায় কারাফটকের সামনে তিনি জানান, বিএনপির সাত নেতা ইতিমধ্যে কারাগারে এসে পৌঁছেছেন। জ্যেষ্ঠ নেতা মাহবুবুর রহমান ও নজরুল ইসলাম খান কারাগারে প্রবেশ করবেন না বলেও জানান দিদার।
দলীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমেদ, জমির উদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা হওয়ার পর এই প্রথম দলটির নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে এসেছেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি’র নতুন দুই কর্মসূচি
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাগারে অবস্থানরত বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নতুন করে দলের পক্ষ থেকে দু’দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামী মঙ্গলবার (৬ মার্চ) ঢাকাসহ সারা দেশে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন এবং
আগামী বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
রবিবার সকালে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পুরোনো ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপি’র চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি
জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
রায় ঘোষণার পর থেকেই পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ, নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে সরাতেই মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, সরকার আগামী নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে। কারণ খালেদা জিয়া নির্বাচনের মাঠে থাকলে জনগণ তার সঙ্গে মাঠে নেমে আসবে। আর বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের একদলীয় শাসনের পথ রুদ্ধ হবে।
তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের এককভাবে ভোট করে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন এ দেশের মানুষ কখনো পূরণ হতে দেবে না। জনগণ তাদের নেত্রীকে মুক্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করবে।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি নেতা বলেন, রাষ্ট্রীয় খরচে কোমর বেঁধে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতারা। গতকালও তিনি খুলনায় গিয়ে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এসব বিষয়ে কমিশনকে জানালেও তারা বলেছেন, তফসিল ঘোষণার আগে তাদের কিছু করার নেই।
বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনের কেন কিছু করার থাকবে? কারণ, ইসি তো সরকারের মাইক্রোফোন হিসেবে কাজ করছে। তারা চাকরি হারানোর ভয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কিছুই বলছেন না। কারণ, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তাদের পরিণতি হবে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার মতো।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক এম এ মালেক, সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহদপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ প্রমুখ।