গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :
গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত মানব দেহের সহনশীল বিনা খেসাড়ী ১ রেকর্ড পরিমান ফলন দিয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলায় প্রতি হেক্টরে এ জাতের খেসাড়ী ১ হাজার ৯ শ’ কেজি উৎপাদিত হয়েছে। প্রচলিত জাতের খেসারী প্রতি হেক্টরে ৭ শ’ কেজি উৎপাদিত হয়। প্রচলিত জাতের তুলনায় প্রায় ৩ গুন উৎপাদন দিয়েছে বিনা খেসাড়ী ১।
বিনা চাষে অনুর্বর নিচু জমিতে এ খেসাড়ী আবাদ করা যায়। রোগ বালাই তেমন নেই। এ জাতের খেসাড়ীতে মানব দেহের ক্ষতিকর বেটা অকজাইল এ্যামাইনো এলানিন নেই। বপনের ১১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই ক্ষেত থেকে ফসল তোলা যায়। এ ফসল চাষাবাদ করে গোপালগঞ্জের কৃষক লাভবান হয়েছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুরে বিনা উপকেন্দ্রে আয়োজিত মাঠ দিবস ও কৃষক প্রশিক্ষণ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ২শ’ কৃষক ও কৃষাণী অংশ নেন। গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র জানিয়েছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলার ১০ হেক্টর জমিতে ২০ টি প্রদর্শনী প্লটে এ জাতের খেসাড়ী আবাদ করা হয়। প্রতি প্লটেই রেকর্ড পরিমান খেসাড়ী উৎপাদিত হয়েছে।
কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের সাফলীডাঙ্গা গ্রামের কৃষক সুজন রায় বলেন, আমি এ বছরই প্রথম বিনা খেসাড়ী ১ আমার ২৫ শতাংশ নিন্ম ও অনুর্বর জমিতে আবাদ করেছি। প্রচলিত জাতের তুলনায় এ খেসাড়ীর প্রায় তিনগুণ ফলন পেয়েছি। এ জাতের খেসাড়ীতে রোগ বালাই নেই বললেই চলে। তাই অধিক উৎপাদন পেয়ে লাভবান হয়েছি।
কাশিয়ানী উপজেলার বেথুড়ি ইউনিয়নের নড়াইল গ্রামের বাসুদেব বিশ্বাস বলেন, এ মৌসুমের যে কোন ফসলের তুলনায় বারি খেসাড়ী আবাদ করে অধিক লাভের টাকা ঘরে তুলেছি। আমার দেখাদেখি আমাদের গ্রামের কৃষক এ খেসাড়ী আবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
বিনা প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (গবেষণা) ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ। এ জেলার জমি নিচু ও অনুর্বর। এখানে সাধারণত কৃষক একটি ফসল ফলিয়ে থাকে। এ জেলার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিনা উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল আবাদ সম্প্রসারেণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, বিনা খেসাড়ী ১ এ জেলায় প্রথম বছরেই কৃষককে রেকর্ড পরিমান ফলন দিয়েছে। প্রচলিত জাতের খেসাড়ীতে মানব দেহের ক্ষতিকর বেটা অকজাইল এ্যামাইনো এলানিন মাত্রা অতিরিক্ত পরিমানে রয়েছে। পক্ষান্তরে বিনা ১ জাতের খেসাড়ীতে ওই উপাদান মানব দেহের সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। এটি মানব দেহের কোন ক্ষতি করবেনা। এ খেসাড়ী মানুষ নিরাপদে খেতে পারবেন। এ জাতের খেসাড়ী আবাদ করে কৃষক যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবেন, তেমনি লাভবান হবেন।
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: শেফাউর রহমান বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার কৃষক প্রতি হেক্টরে এ জাতের খেসাড়ী ১ হাজার ৯ শ’ কেজি উৎপাদন করেছে। জাতীয় পর্যায়ে আমাদের দেশে প্রতি হেক্টরে খেসাড়ীর গড় উৎপাদন মাত্র ৭ শ’ ৫০ কেজি। বিনা খেসাড়ী ১ বাংলাদেশর প্রচলিত যে কোন জাতের খেসাড়ীর তুলনায় সবচেয়ে বেশি ফলন দিতে সক্ষম। এ ছাড়া এ জাতের বীজ আগামী বছরের আবাদের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। এটির আবাদ সম্প্রসারিত হলে সারাদেশে খেসাড়ী বিপ্লব ঘটবে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হরলাল মধু বলেন, গোপালগঞ্জে জেলার ৫ উপজেলায় ১০ হাজার ৬ শ’ হেক্টর জমিতে খেসাড়ীর আবাদ হয়। কৃষক বিনা ১ জাতের খেসাড়ী আবাদ সব জমিতে সম্প্রসারিত করলে এ জেলায় খেসাড়ীর উৎপাদন রেকর্ড পরিমান বৃদ্ধি পাবে। কৃষক লাভবান হবেন।