
খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বাজারের জনগুরুত্বপূর্ণ যতিন কাশেম সড়কে কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ না করতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। ওই সড়ক সংলগ্ন জমির মালিক ও ব্যবসায়ী পার্থ কুমার কুন্ডুর দায়ের করা এক রিট এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটের হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মোঃ মুস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ গত ৩০জুন/২০২১ তারিখে এই রুল জারি করেন।
রুলের তারিখ থেকে আগামী ৬ মাসের মধ্যে যতিন কাশেম সড়কের দুই পার্শ্বস্থ উচ্ছেদকৃত স্থাপনার স্থানে কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না বলে রুলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া যতিন কাশেম সড়ক তথা চুকনগর বাসষ্ট্যান্ড থেকে পোষ্ট অফিস রোড পর্যন্ত কেন ইজারা দেওয়া হবে তার জবাব চেয়ে মোট ৯টি দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন হাইকোর্ট। দপ্তর গুলো হলো ঃ- (১) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের সচিব, (২)বিভাগীয় কমিশনার খুলনা,(৩) চেয়ারম্যান খুলনা জেলা পরিষদ,(৪) খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি,(৫) জেলা প্রশাসক খুলনা,(৬) প্রধান নির্বাহী অফিসার জেলা পরিষদ খুলনা,(৭) অতিঃ জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খুলনা, (৮) উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডুমুরিয়া খুলনা এবং (৯) অফিসার ইনচার্জ ডুমুরিয়া থানা খুলনা।
রুলে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, উক্ত এলাকা খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলাধীন চুকনগর মৌজার সি এস খতিয়ান নং ১২৭ এবং এস এ খতিয়ান নং ২ এর অর্ন্তভূক্ত ১২৭ নং দাগে জেলা পরিষদ সম্পত্তি আইনে অর্পণ, ব্যবস্থাপনা ও হস্তান্তর দিধিমালা /২০১৭ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা তারও কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য,খুলনা জেলা পরিষদের নিকট খেকে বার্ষিক ইজারা নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। এমতাবস্থায় খুলনা জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রনাধীন যতিন কাশেম সড়কে তীব্র যানজট শুরু হলে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে উক্ত দোকানঘর সমুহ অপসারণের জন্যে ব্যবসায়ীদের নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা অপসারণ না করায় জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে গত ২৪শে মার্চ/ ২০২১ তারিখে যতিন কাশেম সড়কের দুই পার্শ্বের শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। যদিও এর কারণে ওই সব ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এ হেন পরিস্থিতিতে পুনঃরায় ওই সড়কের দুই পার্শ্বে জেলা পরিষদ কতৃক স্থাপনা নির্মাণ পূর্বক ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে রাস্তার দুই পার্শ্বের মালিকানা সম্পত্তির ভোগ দখল কারীদের পক্ষ থেকে খুলনা- ৫নং আসনের সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ্রের ডিও লেটারসহ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ে খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু তাতে সুরাহা না হওয়ায় গত ২৭ জুন /২০২১ তারিখে ভূক্তভোগীদের পক্ষে পার্থ কুমার কুন্ডু হাইকোর্টে রিট পিটিশনটি দায়ের করেন। রিটকারীর পক্ষে আদালতে রিট পরিচালনা করেন এ্যাডঃ মোঃ খুরশিদ আলম খান এবং এ্যাডঃ মোহাম্মদ আলী খান।
এ সময় রাষ্ট্র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডিএজি বিপুল বাগমার, এএজি মোঃ সেলিম আজাদ, মোঃ সিরাজুল আলম ভূইয়া, ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন। উভয় পক্ষে শুনানী শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মোঃ মুস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ গত ৩০জুন /২০২১ তারিখে এই রুল জারি করেন।
এদিকে হটাৎ করেই গত ২৯জুন তারিখে কে বা কারা যতিন- কাশেম সড়কের ২ পার্শ্বে ইট এনে স্তুপ করে রাখে। এসময় প্রচার হতে থাকে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নতুন করে ঘর নির্মাণ করে ইজারা দেয়া হবে। এঘটনায় সড়ক সংলগ্ন জমির মালিক ও ব্যবসায়ীরা পূসে উঠে। তারা ৩০জুন তারিখে সম্মিলিতভাবে এর প্রতিবাদ করে। এরই মধ্যে হাইকোর্টের রুলের কপি আসার পর সবাই চুপ হয়ে যায়।
এব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, যতিন কাশেম সড়কে আপাতত কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে না বলে আমি জানি, কারা কবে কোন উদ্দেশ্যে সেখানে ইট জড়ো করেছে সেটাও আমার জানা নেই। হাইকোর্টের রুলের ব্যাপারে তিনি বলেন, রুলের কোন কপি এখনও আমি পাইনি। হাতে পেলে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।