নিজস্ব প্রতিনিধি :- চিকিৎসক সংকটে সাতক্ষীরার ২২ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়েও দেখা পাচ্ছেন না কাংখিত চিকিৎসকের। এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে অন্য রোগের চিকিৎসককে দেখাতে বাধ্য হতে হচ্ছে মানুষকে।
জনবল সংকটে অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, শিশু ওয়ার্ড সামলাচ্ছেন একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক। এ্যানেসথেসিয়া দিচ্ছেন যেকোনো মেডিকেল অফিসার। যখন যে চিকিৎসক (সাধারণ মেডিকেল অফিসার) দায়িত্বে থাকছেন চোখের চিকিৎসা করছেন তিনি। কখনও কখনও উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসাররাও রোগী দেখছেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের ২৭টি পদের মধ্যে ১৪টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি, অর্থ. সার্জারি, চক্ষু, অ্যানেসথেসিয়া), জুনিয়ার কনসালটেন্ট (পেডিয়েট্রিক্স, ইএনটি, প্যাথলজি, এ্যানেসথেসিয়া, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, রেডিওলজিস্ট, মেডিকেল অফিসারের (হোমিও/ইউনানী/আয়ুর্বেদী) একটি ও মেডিকেল অফিসারের দুটি পদ।
এছাড়াও নার্সিং সুপার ভাইজার, স্টাফ নার্স, সহকারী নার্স ও স্টোর কিপারের একটি করে ও সিনিয়র স্টাফ নার্সের ৫টি পদ শূন্য রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, সদর হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ রোগী হয়। সুচিকিৎসা তো দূরে থাক জনবল সংকটে এতো রোগী সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরজমিনে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের দীর্ঘ লাইন। সেবা নিতে আসা সবার মুখেই হতাশার ছাপ। যারা ডাক্তার দেখাতে পারছেন তারাও খুশি নন। কারণ যে রোগের চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন, সেই ডাক্তার নেই। অর্থাৎ পদটি শূন্য রয়েছে।
এমনই একজন তালা উপজেলার মির্জাপুরের ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর হোসেন। দীর্ঘদিন দুটি চোখ নিয়ে ভুগছেন তিনি। এসেছিলেন চোখের ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু চোখের ডাক্তার না থাকায় সাধারণ মেডিকেল অফিসারকে দেখাতেই বাধ্য হলেন তিনি।
তিনি বলেন, কি করবো, চোখের ডাক্তার তো নেই। ভ্যানচালাই। আমরা কি ক্লিনিকে ৫০০ টাকা দিয়ে ভাল ডাক্তার দেখাতে পারি। কিন্তু তালা থেকে সদর হাসপাতালে এসেও যদি ডাক্তার না পায় তাহলে ভাগ্যের দোষ দেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। তারপরও ভয় থাকে, যে ডাক্তার দেখালাম, যদি চিকিৎসা সঠিক না হয়, তাহলে চোখ দুটিই তো শেষ হয়ে যাবে, তখন?- প্রশ্ন করেন তিনি।
সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি রয়েছে শ্যামনগর উপজেলার দামদরকাঠির শাহীদ উদ্দিনের ৩ মাসের ছেলে। শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সদর হাসপাতালে এসেও চিন্তামুক্ত হতে পারেননি তিনি। কারণ সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞের পদটি শূন্য। শিশু ওয়ার্ড চালাচ্ছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক নাজমুল হাসান ও মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট শফিউল্লাহ মুন্না।
শূন্য রয়েছে আরএমও’র মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটিও। এ পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন ডা. হাফিজউল্লাহ।
জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্হিবিভাগের রোগী সামলাতেই রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞের পদটি শূন্য। তাই যখন যাকে পাই (মেডিকেল অফিসার) তাকে দিয়েই কাজ চালানো হয়। জনবল সংকটে কখনও কখনও উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়েও রোগী দেখাতে হচ্ছে। কোন উপায় নেই।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন তৌহিদুর রহমান বলেন, সদর হাসপাতালে জনবল সংকেট চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার অবহিত করেছি। ব্যক্তিগতভাবে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গেও দেখা করেছি। তিনি দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।