সিরাজগঞ্জ থেকে মোহাম্মদ আশরাফুল : ১৯৭১ এ তাঁরা প্রমাণ করে দেখিয়েছে
সৎসাহস থাকলে যে কোন শক্তিকে মোকাবেলা করা যায়।তাঁরা দেখিয়েছে কিভাবে দা,
কুড়াল, লগি, বৈঠা নিয়ে একটি দেশকে স্বাধীন করা যায়। বিশ্ববাসী দেখেছে কিভাবে
গভীর মনোবল নিয়ে এ দেশের দামাল ছেলেরা অত্যান্ত দুর্ধর্ষ নিয়মিত একটি
সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছে! এ জাতিকে বার বার প্রতিক্রিয়াশীলরা দাবিয়ে রাখার
চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন বারই শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি।বঙ্গবন্ধুর ডাকে
সারা দেশের মানুষ সাড়া দিয়ে এই দেশকে স্বাধীন করেছে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে
অর্জিত এদেশ আমার বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
সহযোগী হয়ে সর্ব সময় তাঁর পাশে থেকে জাতীয় চার নেতা এ দেশের জন্য কাজ করে
গেছেন।
আজ ৩ নভেম্বর।জেল হত্যা দিবস।মানব সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কময়, রক্তঝরা ও
বেদনাবিধুর একটি দিন । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ৩রা নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয়
কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে চার জাতীয় নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী
রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ,মুজিবনগর
সরকারের অর্থমন্ত্রী ক্যাপটেন এম মনসুর আলী এবং প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এএইচএম কামরুজ্জামানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একাত্তরের
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা সেদিন দেশ মাতৃকার সেরা সন্তান জাতীয় এই চার
নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট
দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে একাত্তরের পরাজয়ের জ্বালা মিটিয়েছিল। প্রগতি-
সমৃদ্ধির অগ্রগতি থেকে বাঙালিকে পিছিয়ে দিয়েছিল। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর
হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সমগ্র বিশ্ব।
কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় বর্বরোচিত এ ধরনের হত্যাকান্ড পৃথিবীর
ইতিহাসে বিরল।
জেল হত্যার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী
আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তবে দীর্ঘ ২১ বছর এ
বিচার প্রক্রিয়াকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে
মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা
মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান মামলায় রায় দেন। রায়ে রিসালদার মোসলেম
উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও এল ডি (দফাদার) আবুল
হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার
রশিদ খান, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১২ জনকে যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম
হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেওয়া হয়। ওই রায়ের
বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে দেওয়া রায়ে মোসলেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল
রাখেন। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মারফত আলী ও হাসেম মৃধাকে খালাস দেয়।