এস এম শামীম, বরিশাল প্রতিনিধিঃ- বরিশালের আগৈলঝাড়ায় গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে দুইশত আটত্রিশ বছরের প্রাচীণ মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় শুধু আগৈলঝাড়া উপজেলাই নয়, পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া, উজিরপুর, ডাসার, মাদারীপুর, কালকিনি, গৌরনদী, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বয়সের হাজার-হাজার নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করে। মেলা কমিটির সভাপতি দ্বিগবিজয় বিশ্বাস জানান, রামানন্দের আঁক গ্রামে দুইশত আটত্রিশ বছর পূর্বে আউলিয়া মা সোনাই চাঁদের ৬বছর বয়সে বিয়ে হয়। ৭বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নি:সন্তান অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে একটি নিমগাছের গোড়ায় শিবের আরাধনা ও পূজা-অর্চনা আরম্ভ করে। ক্রমশ: তাঁর অলৌকিত্ব ছড়িয়ে পরলে ওই স্থানে বাৎসরিক পূজার আয়োজন করা হয়। মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ ইং সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে নবান্নের অয়োজনের মাধ্যমে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাঁর মৃত্যুর পরে ওই বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। প্রতিবছর এই দিনটি উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, নাম সংকীর্ত্তন, কবিগান শেষে সোয়ামণ (৫০ কেজি) চালের গুড়ার সাথে সোয়ামণ আঁখের গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় কলাসহ অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নবান্ন তৈরী করে মেলায় আগত দর্শণার্থীদের প্রসাদ হিসাবে বিতরণ করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম আকষর্ন পৌষ সংক্রান্তিতে বাস্তুপূজা উপলক্ষে আড়াই’শ বছর ধরে এ গ্রামে মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মারবেল খেলার মূল রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় হরেন বিশ্বাস (৮৪) জানান, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিল। যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে আমরা সেই প্রাচীণ ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এদিনটিকে ঘিরে রামানন্দের আঁক গ্রামে মহোৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের এ মার্বেল মেলায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৬ কি.মি এলাকা জুড়ে মারবেল খেলা চলছে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদী জমি, বাগানসহ সর্বত্রই মারবেল খেলার আসর বসেছে। জমিতে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রী, মনিহারী, খেলনা, মিষ্টি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান। কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে মেলায় আগত সমীর মন্ডল (৩৫) জানান, এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী মারবেল খেলার কথা শুনে মেলায় এসেছি। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। বাশাইল গ্রামের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র অনুপম দাস ও ১০ম শ্রেণীর প্রদীদ রায় জানায়, সারা বছর টাকা জমিয়েছে মারবেল খেলার জন্য। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, কিশোরী, যুবক-যুবতীরা মেলার প্রধান আকর্ষণ মারবেল খেলায় অংশগ্রহণ করেন। মেলা পরিচালনার জন্য ৩৫ সদস্য একটি মেলা উদ্যাপন কমিটি গঠন করা হয়। মেলায় মারবেল খেলার জন্য অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন তাদের জন্য পূর্ব থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলাকে জনপ্রিয় করার জন্য মেলাস্থলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ মাঠ সম্প্রসারণ করার জন্য সরকারের দৃষ্টি কামণা করছেন।