
রাজশাহী মহানগরীর সরকারী কলেজের শিক্ষক দম্পত্তি মানবাধিকার সংগঠন “অধিকার’র নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ ও বিভিন্ন সময়ে ইন্টেলিকচুয়েল পরামর্শ দিয়ে সহায়তা প্রদান করায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য ও সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে নানান অত্যাচারে এখনও দুর্বিসহ অনিশ্চিত জীবযাপন করছেন বলে জানাগেছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, আব্দুল্লাহ আল বসির ও তার স্ত্রী রাজশাহীস্থ সরকারি কলেজের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি একজন শুভাকাঙ্খি হিসেবে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর সাথে যুক্ত রয়েছেন। এ তথ্যটি রাজশাহী আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা জানতে পেরে আব্দুল্লাহ আল বসিরকে দলীয় কর্মীদের দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হেনস্তা করতে থাকেন। এমনকি চাকরিসহ সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য প্রচার করে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছেন। তাঁর শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগ দিয়ে অভিনব কায়দায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চাকরি থেকে বরখাস্তকরণের ব্যবস্থা করেছিলেন। আইনি মোকাবিলায় মিথ্যা এ অভিযোগ থেকে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট থেকে ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু এ দম্পত্তি এখনও ঝুলে আছেন আরেক মিথ্যা মামলায় দুদকের জালে। চাকুরি থেকে অপসারণ করার কৌশলে পুরোপুরি সফল না হয়ে এবার ঐ একই নেতা তার দলীয় এক কর্মীকে দিয়ে দুদকে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে তদবীর করে আমলে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। ২০২০ সাল থেকে দুদক কর্তৃক দীর্ঘসময় হয়রানি শেষে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল আব্দুল্লাহ আল বসিরের দম্পত্তির বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করে মামলা রুজু করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ আল বসির বলেন, বিগত সরকারী দলের নেতা সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন কর্তৃক বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হবার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, “আমাকে দীর্ঘদিন যাবৎ একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেনস্থা ও হয়রানি করা হয়েছে। বর্তমানে দুদকের মামলা নিয়ে ভীষণ ভয়ে আছি। কারণ আমার ইনকাম ট্যাক্স ফাইলের বাইরে কোন সম্পদ নাই। আমার ও আমার স্ত্রীর সকল আয় বৈধ। ট্যাক্স ফাইলের বাইরে গোপন কোন সম্পদ নাই। এসব কিছু নিরপেক্ষভাবে তদন্ত না করে, সরবরাহকৃত ডকুমেন্ট পর্যালোচনা না করে আমার ও আমার স্ত্রীর নামে অন্যায়ভাবে এজাহার দায়ের হয়েছে। যা হয়েছে তা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফ্যাসিবাদি সরকারের নেতার নির্দেশ মেনে আমাদের ধ্বংস করার জন্য।
এদিকে, মো: আব্দুল্লাহ আল বসির ও তাঁর স্ত্রীর ইনকাম ট্যাক্স ফাইল, দুদকে জমা দেয়া সম্পদ বিবরণী ও এজাহার কপিতে যাচাই করে দেখা যায়, তাদের উভয়ের নামে থাকা সকল সম্পদ নিজ নিজ আয়কর ফাইলে উল্লেখ রয়েছে এবং নিয়মানুযায়ী আয়কর পরিশোধিত। তাদের উভয়ের ফাইলে উল্লেখিত আয়ের পরিমান অপেক্ষা সম্পদের মূল্য কম। আবার সম্পদের মূল্য নির্ধারনে অনেক অসংগতি রয়েছে। ভুক্তভুগি ব্যক্তি আরও বলেছেন “দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা এজাহারকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য ঘটনার বিবরণে দুটি মিথ্যা তথ্যের উল্লেখ করেছেন। প্রথমত: আব্দুল্লাহ আল বসির রাজশাহীস্থ স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি থাকার সময় সার্টিফিকেট বেচাকেনা করে অর্থ উপার্জন করেছেন মর্মে জনশ্রুতি ছিল। এটা একটি কাল্পনিক মিথ্যা তথ্য উল্লেখ করে জনাব বসির বলেন “এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ কেউ কোন দিন দেখাতে পারবেনা। কারণ একজন সভাপতি কোন সময়ই একাডেমিক ও সার্টিফিকেট প্রদান কাজে জড়িত থাকেন না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বেচাকেনা সংক্রান্ত কোন তথ্যের প্রচার সমাজে নেই। তাছাড়া সারা উত্তরবঙ্গে আদর্শ লাইব্রেরি সায়েন্স প্রফেশনাল কলেজ হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক সুনাম রয়েছে।” দ্বিতীয়ত উল্লেখ করেছে – জনাব বসিরের স্ত্রীর বিরুদ্ধে চাকরি হতে বরখাস্তকরণ সংক্রান্ত মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। অথচ রায়ের কপিতে দেখা যায়, এ মামলা ২০২৩ সালেই সর্বোচ্চ আদালতে বেকসুর খালাস মর্মে নিষ্পত্তি হয়েছে। ভুক্তভোগী বসির বলেন “এ মামলার রায়ের কপি তদন্তকালে দুদক তদন্ত কর্মকর্তাকে দিলেও তা আমলে নেয়নি। এভাবে মিথ্যা তথ্যের উল্লেখ করে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত গোপন সম্পদের সন্ধান না পেয়েও যেভাবে এজাহার দায়ের করা হয়েছে তাতে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশা ও সংশয়ে আমরা পুরো পরিবার দিন পার করছি। আমরা দ্রুত এ মিথ্যা মামলা থেকে নিষ্পত্তি চাই।”
এ ব্যাপারে অধিকারের রাজশাহীর ফোকাল পার্সন মঈন উদ্দিন খান বলেন, মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে আব্দুল্লাহ আল বসির স্যারের সাথে আমার সম্পর্ক। অধিকার’র কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় পুলিশি ঝামেলায় পরলে তিনি সরাসরি থানায় বা বিভিন্ন স্থানে আমার পাশে দাড়িয়েছেন। এতে তিনি ফ্যসিস্ট আওয়ামী সরকারের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নজরে পরেন এবং বিভিন্ন সময় মানষীক নির্যাতনসহ নানাভাবে হয়রানীর শিকার হোন। আমরা অতি দ্রুত এ মিথ্যা মামলার নিষ্পত্তি চাই।”