দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে চলছে আগাম জাতের আমন ধান কাটা-মাড়াই। কৃষকরা বাড়তি লাভ হিসেবে চাষাবাদ করেছেন স্বল্পমেয়াদি এই আগাম জাতের আমন ধান। এই ধানের কাঁচা খড় গো-খাদ্য হিসেবে বিক্রি করে একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছেন কৃষক,অন্যদিকে কম খরচেই গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পেরে খামারীদেরও মিলছে স্বস্তি।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ১৮ হাজার ১৪৮ হেক্টর জমিতে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ও উপশি জাতের তেজগোল্ড, ব্রি-৯০, বিনা-১৭, সম্পাকাঁটারি, জাঁপাড়ি, ধানিগোল্ডসহ বিভিন্ন আগাম জাতের ধান ৩হাজার ২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলবাড়ী পৌর শহরের কলেজ রোড,উপজেলা রোড,নিমতলা মোড়,মাদিলাহাটসহ বেশ কিছু এলাকায় সড়কের পাশে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে আগাম ধানের কাচা খড়ের আটি। সেখান থেকে স্বল্প মূল্যে খড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন খামারিসহ ঘরে ছোট পরিসরে গরু পালনকারীরা। এতে কৃষকরাও মাঠের খড় বিক্রি করে তাদের চাষের খরচ তুলতে পারছেন। বাজারে ধানের দামের সঙ্গে খড়ের উচ্চমূল্য পেয়ে বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন ক্ষুদ্র-প্রান্তিক কৃষকরা। পাশাপাশি আলুসহ অন্যান্য রবি ফসল চাষেরও খরচ কিছুটা এগিয়ে নিতে পারছেন তারা।
এদিকে আগাম জাতের এই ধান কাটা-মাড়াই শেষে সেসব কাচা খড় সংগ্রহ করে কাঁচা খড়ের রমরমা ব্যবসা করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। চাহিদা থাকায় মাঠে মাঠে ধানের কাঁচা খড় কেনার জন্য মৌসুমি খড় ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। ধান কাটা-মাড়াই শেষে তারা খড় কিনে এনে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
খামারিরা বলছেন, বর্তমানে এক পোন (৮০টি খড়ের আঁটি) শুকনা খড়ের আঁটি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ হিসেব অনুযায়ী প্রতি আটির দাম পড়ে ১০ টাকা। এদিকে ২০ আঁটি (এক বোঝা) কাঁচা খড় ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি পিচ কাচা খড়ের আটির দাম পড়ছে ৩ টাকা। তাই স্বল্প মূল্যে আগাম ধানের কাচা খড় কিনে খরচ বাঁচাচ্ছেন খামারিরা। তবে প্রাণী চিকিৎসকরা বলছেন,গরুকে কিটনাশক সমৃদ্ধ কাঁচা খড় খাওয়ানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে করে গরুর নানা সমস্যাসহ মৃত্যুও হতে পারে।
শিবনগর ইউনিয়নের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, আগাম ধানের পর আগাম আলু চাষ করলে তার দামও ভালো পাওয়া যায়। ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ জমিগুলোতে আগাম জাতের আমন ধান করা হয়। ধান কাটা মাড়াই শেষে কাচা খড়গুলো বিক্রি হচ্ছে। আগাম আলু চাষের জন্য জমিগুলোকে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সারোয়ার হাসান বলেন, ধানের রোগ বালাই ও পোকা দমনে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় এবং সার প্রয়োগ করা হয়। যা গরুর দেহের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এতে করে পেট ফোলা, পাতলা পায়খানা, রক্তে অক্সিজেন চলাচল বন্ধ হওয়াসহ গরুর বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সে কারণে গরুকে কাঁচা খড় খাওয়াতে হলে ধুয়ে শুকিয়ে খাওয়াতে হবে। তবে কীটনাশক বিহীন কাঁচা ঘাস ও খড় গরুর জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ।










