১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

শিরোনামঃ-
  • হোম
  • দেশজুড়ে
  • ৪৮ বছর পর সুনামগঞ্জের বঙ্গবন্ধুর নামকরণকৃত সোনার বাংলা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি আলোর মুখ দেখল




৪৮ বছর পর সুনামগঞ্জের বঙ্গবন্ধুর নামকরণকৃত সোনার বাংলা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি আলোর মুখ দেখল

প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

আপডেট টাইম : নভেম্বর ১৭ ২০১৯, ২১:৩৬ | 785 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামকরণকৃত নবনির্মিত সোনার বাংলা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সেলিমগঞ্জ বাজারস্থ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিসর চৌধুরী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত (সিলেট-সুনামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মোছাঃ শামীমা আক্তার খানম, সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাস, জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইউসুফ আল আজাদ, ধর্মপাশা উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পাল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নিয়াজ মোর্শেদ তালুকদার ও স্বাস্থ্য সহকারী আবুল কালাম আজাদের যৌথ সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু তালুকদার, জামালগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সাইফুল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আসাদ উল্লাহ সরকার, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জীতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আশরাফুজ্জামান, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রনী, ফেনারবাঁক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হুদা চৌধুরী খোকন, কৃষক লীগ নেতা আব্দুল হক প্রমুখ।

বক্তাগণ বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে কিছু কুচক্রী মহল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে বিবাদ লাগানোর চেষ্টা করে আসছে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। উন্নয়নের স্বার্থে আমরা একে অপরের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাব। আমাদের মাঝে ফাটল ধরানোর জন্য একটা মহল কাজ করে যাচ্ছে। তাদের কথায় কান না দিয়ে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন। যারা দলের মধ্যে ফাটল ধরাতে চায় তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকবেন।
বক্তারা আরও বলেন, সাচনা বাজারের পুরাতন হাসপাতালটি পুনঃরায় চালু করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং গজারিয়া ও ল²ীপুর বাজারে ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করার চেষ্টা চালিয়ে যাব। আলাউদ্দিন মেমোরিয়াল জুনিয়র হাই স্কুলটি কিছুদিনের মধ্যে কলেজিয়েট স্কুলে রূপান্তর করা হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ভ‚মিদাতা সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শেষ করে এডভোকেট আসাদ উল্লাহ সরকার ময়মনসিংহ জেলা স্কুল ক্যাম্পে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র জমা দিয়ে সেলিমগঞ্জ বাজারের পাশে নিজ গ্রাম কালাগুজায় চলে আসেন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের স্বরচিত নাটক ‘সংগ্রামী জনতা’ এলাকার সকলকে নিয়ে মঞ্চস্থ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ায় ভারত থেকে শরনার্থীগণ দেশে ফিরতে শুরু করেন। কোন যানবাহন না থাকায় পায়ে হেঁটে দিরাই-শাল্লা, শ্যামারচরের শরণার্থীগণ নিজ এলাকায় যেতে থাকে। দিনের পর দিন দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে অনেকেই সেলিমগঞ্জ বাজারে এসে রাত্রিযাপন করেন। ক্ষুধার্ত ও পায়ের ব্যথায় অনেকেই ডায়রিয়া আমাশয়সহ বিভিন্ন রোগে ভোগছিলেন।

অনেককেই অসুস্থতার কারণে সেলিমগঞ্জ বাজারে অবস্থান করতে হয়েছে। তাদের এমন দূরাবস্থা দেখে তিনি স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ফার্মেসী থেকে ঔষধসহ থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে থাকেন। এভাবে কিছুদিন চলার পর তাঁর মাথায় চিন্তা আসল এখানে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার। সাথে সাথে তার পিতা সাফিজ উদ্দিন সরকারের সাথে হাসপাতাল করার ব্যাপারে পরামর্শ করেন। তিনি এ ব্যাপারে আনন্দিত হয়ে উৎসাহ প্রদান করেন। পরদিন সেলিমগঞ্জ বাজারে অবস্থিত ফার্মেসীর মালিক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সাথে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পরামর্শ করেন এবং প্রতিদিন অন্ততঃ তিন ঘন্টা হাসপাতালে রোগী দেখার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি সানন্দে এ প্রস্তাবে রাজি হন। পরদিন পিতামাতার কাছ থেকে ১শ’৫০ টাকা নিয়ে সাচনা বাজার থেকে ঔষধ কিনে নিয়ে সেলিমগঞ্জ বাজারস্থ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কার্যালয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেন। দিন দিন রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় ব্যয়ভার বহন করতে তার হিমসিম খেতে হয়। পরবর্তীতে তাঁর পিতা সাফিজ উদ্দিন সরকার ও মামা ডা. দেলোয়ার হোসেন অর্থ সঙ্কটের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে পিতা সাফিজ উদ্দিন জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের আগে বলে গিয়েছিলেন কোন ধরনের সমস্যায় পড়লে আমাকে জানাবেন।

এ কথা শোনে পরদিন ভৈরব লঞ্চযোগে ৩ জন ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর কার্যালয়ে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রসহ হাজির হয়ে হাসপাতালের সমস্যার কথা খোলে বলেন। তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, হাসপাতাল করবেন জায়গা দিতে পারবেন। তখন সাফিজ উদ্দিন সরকার বলেন, যতটুকু জায়গা লাগে আমি দিয়ে দিব। তারপর বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করেন, হাসপাতালের নাম কি হবে? তখন ছেলে আসাদ উল্লাহ সরকার জানান, বঙ্গবন্ধু দাতব্য চিকিৎসালয় নতুবা সোনার বাংলা দাতব্য চিকিৎসালয়। তিনি আনন্দের সহিত খুশি হয়ে, সোনার বাংলা দাতব্য চিকিৎসালয় নামটি পছন্দ করেন। সাথে সাথেই বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদকে ডেকে হাসপাতালের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। তোফায়েল আহমেদ তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আব্দুল মন্নানের সাথে আলোচনা করে তাদেরকে বাড়িতে চলে যাওয়ার জন্য বলেন। বাড়িতে আসার কিছুদিন পর রেডক্রসের দুধ, চিনি ও ঔষধপত্রসহ অন্যান্য মালামাল পাঠানো হল হাসপাতালের নামে।

এতে এলাকাবাসী খুশি হয়ে হাসপাতালটির উন্নয়নে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন এবং সাফিজ উদ্দিন সরকার হাসপাতালের নামে ৩৬ শতাংশ জায়গা দান করে দেন। এর কিছুদিন পর হাসপাতাল সরকারিকরণ হলে ডা. দেলোয়ার হোসেনকে এ হাসপাতালের চিকিৎসক নিয়োজিত করা হয় এবং কম্পাউন্ডার হিসেবে লালপুর গ্রামের মোতালেব মিয়া ও পিয়ন হিসেবে মনোয়ার হোসেনসহ ৫ জন সরকারিভাবে নিয়োগ পান। পরে সরকারিভাবে একটি হাফবিল্ডিং ঘর নির্মাণ করা হয়। এর নামকরণ করা হয়েছে সোনার বাংলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এরপর থেকেই এ নামেই হাসপাতালটি ধাপে ধাপে এলাকার সাধারণ মানুষের সুচিকিৎসায় এগুতে থাকে। কয়েক বছর আগে ডাক্তার ও কর্মচারী সঙ্কটের কারণে হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ইং সনে ৩০ জুলাই উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিসর চৌধুরী সোনার বাংলা উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির প্রতিরক্ষা দেয়াল ও ভবন নির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করেন, হাসপাতালটি বন্ধ থাকায় সরকারের স্বাস্থ্য সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যাহত হচ্ছে। তাই হাসপাতালটি পুনঃসংস্কারের মাধ্যমে তা চালু করে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান। তারই প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ডিও লেটারসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হাসপাতালটি দ্বিতল ভবনসহ ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করার জন্য অনুরোধ জানান। তারই প্রেক্ষিতে ৪৮ বছর পর আলোর মুখ দেখল বঙ্গবন্ধুর দেওয়া নামকরণকৃত সোনার বাংলা উপস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি- আলহাজ্ব আবদুল গফুর ভূঁইয়া,সাবেক সংসদ সদস্য, প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

 

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত।

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET