
একমাত্র কোরআনের শাসন কায়েমের মাধ্যমে একটি মানবিক বাংলাদেশে গড়তে চাই উল্লেখ করে জামাতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মামলা বাণিজ্য করা থেকে বিরত থাকুন। যারা এসব করছেন, বিনয়ের সাথে বলি এগুলো বন্ধ করেন। তবে যদি আমাদের এই বিনয়ী অনুরোধ কেউ না শোনে, তাহলে তাদের আমরা বলছি, আমাদের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি।
শনিবার দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে এ সব কথা বলেন তিনি। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এই মাঠে জামায়াতের এমন কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এই কর্মী সম্মেলনে যোগ দিতে সকাল থেকেই মাদ্রাসা মাঠে নামে নেতাকর্মীদের ঢল।
কর্মী সম্মেলনে ড. শফিকুর রহমান আরও বলেন, দুর্নীতি এবং দুশাসনের কবর রচনা করতেই আমাদের সন্তানরা রক্ত দিয়েছেন। এখনো অফিস আদালতে যারা ঘুষ বানিজ্য করছেন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মামলা বাণিজ্য করছেন তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ এগুলো করবেন না। এগুলো করলে তাদের আত্মা কষ্ট পায়। তাদের কষ্ট দিবেন না।
তিনি বলেন, দুর্নীতি মুক্ত, চাঁদাবাজ, দখলদার মুক্ত ন্যায়ের বাংলাদেশ গড়তে চাই। আল্লাহর শক্তিতে বলিয়ান জাতি গঠন করতে চাই। যতক্ষন পর্যন্ত ইনসাফ এ জমিনে কায়েম না হবে। ইনসাফ কায়েমের গ্যারান্টি একমাত্র আল কোরআন দিতে পারে। আল কোরআনের শাসন সকল ধর্মের, সকল বর্ণের, সকল দলের মানুষের জন্য একমাত্র ইজ্জতের গ্যারান্টি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা রক্ত দিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলার এই সুযোগ করে দিয়ে গেছে তাদের কাছে জাতি কৃতজ্ঞ। এই ঋণের দায় আমাদের শ্রদ্ধার সাথে আজিবন পরিষদ করতে হবে। জুলাই আন্দোলনে যত শহীদ হয়েছে আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ, তাদের কাছে ঋণী। তারা জাতীয় সম্পদ, জাতীয় বীর। তাদের আমরা মাথায় তুলে রাখতে চাই।
এসময় তিনি আরও বলেন, শহীদ পরিবার ও আহতদের দেখভাল করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এটা তাদের প্রতি কোনো দয়া নয়। যারা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছে তাদের কাছে পুরো জাতি কৃতজ্ঞ। এই ঋণের দায় আমাদের আজীবন শ্রদ্ধার সাথে পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। যে কাঙ্খিত বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। সারাদেশে ফুটপাত, হাটবাজার, জলমহাল, বালুমহাল, টেম্পুস্ট্যান্ডসহ সবজায়গায় চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব চলছে। অফিস, আদালতে ঘুষ বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্য চলমান। যারা এসব করছেন তাদের কাছে বিনয়ী অনুরোধ ছেড়ে দেন। আল্লাহর ওয়াস্তে এসব করবেন না। আমাদের শহীদদের প্রতি এগুলো অসম্মান, আমাদের পঙ্গুত্ববরণ করা, আহত ছেলেমেয়েদের জন্য এসব চরম কষ্টের।
মানবরচিত মতবাদ সম্পর্কে জামায়াত আমীর আরও বলেন, বিশ্বের কোথাও সমাজতন্ত্র, কোথাও ধর্মনিরপেক্ষতা, কোথাও পুঁজিবাদ আবার কোথাও প্রচলিত আছে ফ্যাসিবাদ এসবই মানুষের গড়া। আসমান-জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে সব আল্লাহর হুকুম মানে। একটা ছাগলও অন্য ছাগলের নিয়মে চলে না, কিন্তু আমরা মানুষ এতো নিকৃষ্ট যে মানুষের তৈরি করা নিয়ম মেনে চলি।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ যারাই করেছে বিগত সরকার তাদের খুন-গুম করেছে। গত সাড়ে ১৫ বছর একটানা খুন-গুম চালিয়ে ওদের পিপাসা নিবারণ হয়নি। জুলাইয়ে তারা শিক্ষার্থীদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ রেখে লাশ গুম করা হয়েছে, পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। যারা রক্ত দিয়ে এই পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে, জোর করে চাপানো গোলামী থেকে এ জাতিকে মুক্ত করেছে তাদের কাছে শুধু আমরা না পুরো জাতি কৃতজ্ঞ।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মহানগর জামায়াতের আমির ড. কেরামত আলী। সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মোবারক হোসাইন, রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মো. সাহাবুদ্দিন, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক প্রমূখ।
সম্মেলন পরিচালনা করেন মহানগরের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মন্ডল ও সহকারি সেক্রেটারি শাহাদত হোসেন এবং জেলা সেক্রেটারি গোলাম মুর্তুজা ও সহকারি সেক্রেটারি নুরুজ্জামান লিটন।