প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে বরিশালের সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই-তৃতীয়াংশ মাঠ দখল করে মেলা চালাচ্ছে একটি মহল। ফলে বিদ্যালয়ের মাঠে গত ৩ সপ্তাহ ধরে মেলা চলায় শিক্ষার্থীদের চলাফেরা, খেলাধূলা ও শিক্ষা কার্যক্রম বিঘœ হচ্ছে। এমনকি ওই বিদ্যালয়টি ছাড়াও গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২/৩’শ শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মেলায় ঘোরাফেরা করছে এমন অভিযোগের ভিত্তিকে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে যায় নয়া আলোর প্রতিবেদক। এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বক্তব্য চাইলে টনক নড়ে প্রশাসনের। সোমবার রাতেই উপজেলা প্রশাসন এস্কেভেটর ও রোলার মেশিন দিয়ে গুড়িয়ে দেয় স্টলগুলো।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, দর্শনার্থী ও স্টল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অলি উল্লাহর মৌখিক অনুমতি নিয়ে ১৬ অক্টোবর থেকে মাঠের দুই তৃতীয়াংশের চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে ৬৩টি স্টল ও একটি নাগরদোলা নির্মাণ করে মেলার কর্যক্রম শুরু করেন মেলার আয়োজক আজগর সরদার। যার প্রতিটি স্টল বরাদ্দের জন্য ধার্য্য করা হয় ৫০ হাজার টাকা। এবং ধার্য্যকৃত টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে স্টল মালিকরা ৫০/৫৫টি স্টলে মালামাল তুলে গত ৩ সপ্তাহ ধরে বিদ্যালয় থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে বেচাকেনা করে আসছেন। এসময় ওই বিদ্যালয়সহ গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২/৩’শ শিক্ষার্থীকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মেলায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।
মায়ের দোয়া কসমেটিক্স স্টলের মালিক মো. সোহাগ হোসেন বলেন, আমি দেড় লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে গত ২০ দিন ধরে মেলায় ৩টি স্টলে মালামাল উঠিয়ে বেচাকেনা করে আসছি। তবে অনুমতি না থাকায় বেচাকেনা কম প্রশাসনের অনুমতি পেলে আরো বেশি লোকজন আসতো ও বেশি বেচাকেনাও হতো। এখন বিক্রি করে যা লাভ হয়, ষ্টাফদের খরচ দিয়ে লসে আছি। বেশীর ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মেলায় ঘুরতে আসে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনাও নষ্ট হচ্ছে।
মেলার দর্শনার্থী আগৈলঝাড়া আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজের ছাত্র হৃদয় ও তামিম হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেলায় ঘুরতে এসে দেখি মেলা ভালোভাবে জমে উঠেনি। তাই ঘুরে ঘুরে স্টলগুলো ও দর্শনার্থীদের দেখছি।
গৌরনদী গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী আরাভি রহমান জানায়, ক্লাসের স্যারকে না বলে মেলায় ঘুরতে এসেছি।
সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে মেলার আয়োজককে (আজগর) মেলার স্টল ভেঙ্গে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. অলি উল্লাহ্ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মেলার আয়োজক আজগর সরদার আমার কাছে অনুমতি চাইলে আমি শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করে তাকে মৌখিক অনুমতি দেয়ার পর তিনি (আজগর) বিদ্যালয় মাঠে স্টল নির্মাণ করেন। তখন তাকে বলা হয়েছিল জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি আনতে না পারলে মেলার স্টল ভেঙ্গে নিতে হবে। গত ৩ সপ্তাহেও প্রশাসনের অনুমতি আনতে না পারায় তাকে মেলার স্টল ভেঙ্গে নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু আজগর আমাদের সাথে টালবাহানা করে আসছিল পরে সোমবার থানায় সাধারণ ডায়েরি ও আয়োজককে নোটিশ প্রদান করি।
মেলার বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু আবদুল্লাহ্ খান বলেন, অবৈধ ভাবে স্কুল মাঠ দখল করে স্টল নির্মাণের খবর পেয়ে সোমবার রাতে স্টলগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।