কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বিরোধকৃত সম্পত্তিতে প্রভাবশালী মহল কর্তৃক সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে প্রশাসন উভয়পক্ষকে নোটিশ দিলেও নির্মাণকাজ চালাচ্ছে প্রভাবশালী খরিদদাররা। ভুক্তভোগী সোনাপুর গ্রামের মৃত এনামুল হক চৌধুরীর মেয়ে নুরজাহান বেগম পিতৃওয়ারীশি সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার লক্ষে আদালতে দেওয়ানী মামলা ও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। নুরজাহান বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিবাদমান ভূমিতে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। সরেজমিন পরিদর্শনকালে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের আলামত দেখা গেছে।
জানা যায়, উপজেলার জগন্নাথদিঘী ইউনিয়নের সোনাপুর মৌজার এনামুল হক চৌধুরীর কন্যা নুরজাহান বেগম পিতার ওয়ারিশসূত্রে কতেক ভূমিতে মালিক হন। কিন্তু বিএস জরিপের সময় অন্য ওয়ারিশগণ তথ্য গোপন করে বিএস খতিয়ান সৃজন করেন। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি’র কার্যালয়ে নামজারির বিরুদ্ধে দায়ের আপত্তি পত্রে নুরজাহান বেগম উল্লেখ করেন, তিনি সোনাপুর মৌজায় বিএস ১৯৫ ও ২২৫নং খতিয়ানে সাড়ে ২৬ শতক সম্পত্তি ওয়ারিশসূত্রে মালিক। তাঁর পিতার মৃত্যুর পর ভাবি তাজ মহন বেগম, তার মেয়ে রৌশন আরা বেগম, আয়েশা আক্তার ও আমেনা আক্তার যোগসাজশে নুর জাহানকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে তাদের নিজ নামে বিএস খতিয়ান সৃজন করে। তাজ মহন বেগম ওই সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করেছে। আরও কিছু সম্পত্তি বিক্রির পাঁয়তারা করছে।
বিক্রিকৃত সম্পত্তিতে খরিদদাররা জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন নুর জাহান বেগমের ছেলে একই ইউনিয়নের তালগ্রাম নিবাসী মোঃ সফিউল্যাহ ভুঁইয়া। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, সোনাপুর গ্রামের এবিএম সাবের হোসেন, জাহিদ করিম চৌধুরী, মাসউদ করিম চৌধুরী, ইসমাইল করিম চৌধুরী, রৌশন আরা বেগম, আয়েশা আক্তার, আবদুর রহমান, জুলেখা আক্তার গত ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে বিরোধকৃত ওই সম্পত্তিতে পূর্ব পরিকল্পিত ও আকস্মিকভাবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করে। ঘটনা শুনে দখলকারীদের জিজ্ঞাসা করলে উল্টো তারা সফিউল্লাহ ভুঁইয়ার উপর ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে তারা এনিয়ে থানায় বা কোর্টে মামলা করলে পারিবারিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি-ধমকি প্রদান করে।
এ ঘটনায় নুর জাহান বেগম বাদি হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ১৪৫ ধারা জারি করে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ মশিউর রহমান উভয়পক্ষকে আদালতের নোটিশ প্রদান করে। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সাবের হোসেন গং জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী নুরজাহান বেগমের ভাতিজি রৌশন আরা বেগম বলেন, ‘আমাদের ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি সাবের হোসেন গংদের নিকট বিক্রি করি এবং দখল হস্তান্তর করি। কিন্তু পরবর্তীতে আমার ফুফু বাদি হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছে।
সীমানা প্রাচীর নির্মাণকারী ও সম্পত্তির খরিদদার এবিএম সাবের হোসেন ও তাঁর ভাই জাহিদ করিম চৌধুরীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া যায়নি।
চৌদ্দগ্রাম থানার সেকেন্ড অফিসার মোঃ মশিউর রহমান বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও বাদির অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিকবার চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিবাদীরা পুলিশ চলে আসার পরে হয়তো নির্মাণ কাজ করেছে।