সাগরের কোলে সুন্দরবনে শুরু হয়েছে শুটকি তৈরির মৌসুম। সোমবার শুরু হয়ে পাঁচ মাস ধরে চলবে সাগরে জেলেদের মাছ ধরা ও শুটকি তৈরির কাজ। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দুবলার চরসহ পাঁচটি চরে প্রায় ৩০ হাজার জেলে যাত্রা শুরু করেছে। বাগেরহাটের রামপাল, মংলা ও শরণখোলা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রবিবার মধ্যরাতে দুবলার চরে রওনা হয়েছে তারা। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত দুবলার চর, আলোরকোল, মাঝেরকিল্লা, নারকেলবেড়িয়া ও শ্যালার চরে চলবে শুটকি উৎপাদন। গত বছরের শুটকি মৌসুমে রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় ৬ কোটি টাকা এ বছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ কোটি টাকা।
বন বিভাগ জানিয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার শুটকি উৎপাদন বাড়বে। চরগুলোতে জেলেদের থাকা ও শুটকি সংরক্ষণের জন্য ৯৮৫টি ঘর ৫৭টি ডিপো ও ৯৩ টি দোকানঘর স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে গত মৌসুমীর চেয়ে কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে এই সংখ্যা। শুটকি উৎপাদনের লাইসেন্সধারী ১৭ জন বহদ্দার বা মহাজনের অধীনে দুবলার চর, আলোর কোল, মাঝের কিল্লা, নারকেলবেড়িয়া ও শ্যালার চর সহ চারটি চরে অন্তত ১০ হাজারের বেশি জেলে ও শ্রমিক অবস্থান করবে।
এদিকে শুটকি মৌসুম ঘিরে প্রস্তুতিতে ব্যস্ত উপকূলের জেলেরা বঙ্গোপসাগরের পাঁচটি চর নিয়ে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় মৎস্যকেন্দ্র দুবলার চর শুটকি পল্লী। বছরের পাঁচ মাস সাগরের লোনা পানি ঝড় জলচ্ছাসের সঙ্গে লড়াই করে মাছ ধরেন জেলেরা। সেগুলো রোদে শুকিয়ে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে তৈরি করেন শুটকি। তাদের মধ্যে ৯০% জেলেই বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সমুদ্রে যাত্রা শুরু করেন। তবে সুন্দরবন দস্যূমুক্ত হলেও মৎস্যজীবীদের মনে রয়েছে সংশয়। শোনা যাচ্ছে দস্যু নামার গুঞ্জন। দস্যুরা সাগরে নামলে তাদের সর্বনাশ হবে। জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অবৈধভাবে কেউ যেন মাছ ধরতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেরা।
সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পরিবেশবিদ লায়ন ডক্টর শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন আমাদের মায়ের মতো আগলে রেখেছে কিন্তু আমাদের লোভের কারণে আজ মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন এই সুন্দরবন। সুন্দরবন রক্ষা করতে না পারলে আগামীতে পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপন্ন হতে পারে। শুটকি মৌসুমে জেলেরা যাতে ঠিকমতো মৎস্য আহরণ করতে পারেন সেজন্য বনবিভাগের ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলে পল্লীর বিশেষ টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, গতবছর রাজস্ব আয় হয়েছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবার ৭ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঘর তোলার যাবতীয় মালামাল মহাজন বহদ্দাররা তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে নিয়ে আসবেন। জেলেদের খাবার পানির সংকট স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
Please follow and like us: