বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বাগেরহাট জেলার সকল ওয়ার্ড কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সদস্য সংগ্রহের নিমিত্তে যাচাই-বাছাই কমিটি এবং সদস্যের তালিকায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের নির্যাতিত বিএনপি নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ১৭-১৮ বছর যাবত স্বৈরাচারী দলটির নেতাকর্মীর হাতে নির্যাতিত হয়ে আবার তাদের সাথে বিএনপি’র একই কমিটিতে নাম লেখাতে বিব্রত বোধ করছেন তারা। দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একশ্রেণীর নেতার কারণে কিছুসংখ্যক মুজিববাদী বিএনপিতে নাম অন্তর্ভুক্তির সুযোগ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের। তদন্ত করে অতি দ্রুত আওয়ামী লীগ কর্মীদের নাম বাদ দিয়ে শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নিবেদিত ব্যক্তিদের নিয়ে ওয়ার্ড সহ সকল কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
বিএনপি নেতাকর্মীদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোড়েলগঞ্জের পঞ্চকরন ইউনিয়নের শওকাত হোসেন লিটু যিনি দীর্ঘ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা রেখে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পালাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিএস ওয়াহিদা আক্তার শিলাসহ বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতার সাথে হাস্যোজ্জ্বল ছবি রয়েছে তার। তাকে মোড়লগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে। পঞ্চকরন ইউনিয়নেও তাকে বিএনপি’র সদস্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া মোড়েলগঞ্জের আওয়ামীলীগ কাণ্ডে বিতর্কিত বহরবুনিয়া ইউনিয়নের নাসির ফকির, নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের ইউনুস আলী মাস্টার, জিউধারা ইউনিয়নের আবু দাউদ মৃধা, হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের মোস্তফা, চিংড়াখালী ইউনিয়নের আমিনুলসহ অনেকের নামে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা।
বাগেরহাট পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের যাচাই-বাছাই কমিটির ৬ নং সদস্য মোহাম্মদ জুয়েল কমিটি ঘোষণার পরদিন রাতেই মাদকসহ বাগেরহাট সদর মডেল থানা পুলিশের হাতে আটক হন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা রয়েছে এমন অনেক সদস্যকে বাগেরহাট পৌর এবং উপজেলায় যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তারাই আওয়ামী লীগের কর্মীদের বিএনপির ওয়ার্ড সদস্য হিসাবে নাম অন্তর্ভুক্তি করনের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাগেরহাট সদরে বিএনপি’র মধ্যে গ্রুপিং এর কারণে এই সুযোগ কাজে লাগাবে তারা বলেও জানিয়েছেন বিভিন্ন এলাকার বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান কচি যার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নং ১২৩ এবং আওয়ামী লীগের কুপন নং ৬৬৯৯৪৭৪। যিনি ওই ইউনিয়নের বাদশা চেয়ারম্যানের হাতুড়ি বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচিত। তাকে বিএনপি’র সদস্য সংগ্রহের নিমিত্তে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা-মোকাদ্দামায় আওয়ামী লীগ নেতাদের উৎসাহিত করতেন তিনি, বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরতে ওই এলাকায় হাতুড়ি বাহিনীর সাথে মহড়া দিতেন তিনি। নানান ভাবে বিএনপি কর্মীদের হয়রানি করতেন বলেও জানান কলাতলা এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা। এছাড়া জাকির গাজী, মনিরুজ্জামান সহ অসংখ্য আওয়ামী লীগ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের।
এছাড়া রামপাল উপজেলার আব্দুল কাইয়ুম, মোহাম্মদ আকরাম শেখ, ইমরান হোসেন মৃধা, হিজল শেখ সহ ফকিরহাট মোল্লাহাট কচুয়া মোংলা এবং শরণখোলা সহ জেলার সকল উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত নতুন সদস্যের তালিকায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতা ও সদস্যদের নামে অভিযোগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীরা। দলের বৃহত্তর স্বার্থে যাচাই-বাছাই পূর্বক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাম বাদ দিয়ে বিএনপি’র নির্যাতিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটিসহ বিএনপি’র সকল কমিটি গঠনের দাবি জানান বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা।
Please follow and like us: