গাজীপুরের শ্রীপুরে লোকালয় থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির লজ্জাবতী একটি বানর উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। শুক্রবার (২৭মে) সন্ধ্যায় উপজেলার দক্ষিণ ভাংনাহাটি গ্রামের খাসপাড়া এলাকা থেকে বানরটি উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় আবুল হোসেন ছেলে রাজন আম পাড়তে গিয়ে আম গাছে বানরটিকে দেখতে পায়। পরে সে এটিকে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসে। বানরটি তখন খুবই দূর্বল ও ক্ষুধার্ত ছিল। স্বাভাবিক খাবার দেওয়ার পর বানরটি এখন সুস্থ আছে ।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানান যায়, ওই এলাকায় এক সময় গভীর বন ছিল। বনে বাঘ, হরিন সহ বিভিন্ন প্রাণী ও ছিল। এখন বন নেই প্রাণীও নেই। এর আগে এমন প্রাণী তারা দেখেননি। এ দূর্লভ প্রাণীটি কিভাবে কোথা থেকে লোকালয়ে এসেছে এটি তাদের বোধগম্যনয়।
লজ্জাবতীরা অন্যান্য বানরের চাইতে গঠন ও চেহারায় আলাদা। অন্য বানরদের তুলনায় সহজেই পৃথক করা যায় তাদের। মাঝারি আকৃতির বানরগুলোর পিঠ ধূসর বাদামি পশমে আবৃত হয় এবং নিতম্বের দিকটা সাদা পশমে আবৃত থাকে। সামনের অংশে বুক এবং পেট সাদা কিংবা ধূসর পশমে ঢাকা থাকে, এর উপর কালো বা বাদামী ছোপও থাকতে পারে। গোলগাল মাথার উপরে মাঝখান বরাবর একটি লম্বা কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায়। মাথার দুপাশে দুদিকেও অনেক সময় কালো ছোপ থাকে। হাতগুলো ছোটো এবং সাদা, পা মসৃণ ও বিবর্ণ, এর সাথে থাকে ছোটো একটি লেজ। মাথার সামনে থাকে দুটো বড়ো বড়ো চোখ। বড়ো চোখগুলোয় রঙিন আলোকচ্ছটার প্রতিফলন দেখা যায়। এমন অনন্য গড়নের কারণে সহজেই চিহ্নিত করা যায় তাদের। এদেরকে বাংলা লজ্জাবতী বানর হিসেবেও ডাকা হয়।
দিনের বেলা উল্টো ঝুলে থাকা বাংলা লজ্জাবতী বানর। এরা সাধারণত দিনে বের হয় না, লুকিয়ে থাকে। লজ্জাবতী বানরেরা নিশাচর। দিনের বেলায় এদের খুব কম দেখা যায়। লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে তারা। খুব প্রয়োজন ছাড়া এরা সহজে বের হয় না, সবসময় গাছের মগডালে থাকে। তারা উল্টো হয়ে ঝুলতে ভালোবাসে, মগডালে থেকে গাছের কঁচি পাতা চিবিয়ে খায়। এছাড়া এদের খাদ্য তালিকায় ছোটো ছোটো পোকামাকড়, ছোট পাখি ও বিভিন্ন প্রাণীর ডিম রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো এরা হাত দিয়ে খাবার না খেয়ে সরাসরি মুখ দিয়ে খায়, একদম পাখিদের মতো।
স্ত্রী বানরেরা সাধারণত বছরে একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। মিষ্টি দেখতে এই বানরগুলো ২০ বছরের কাছাকাছি বাঁচে। প্রাইমেটদের মধ্যে এরা ভেনোমাস অর্থাৎ বিষধর। এদের কামড় ভয়ানক হতে পারে, যদিও এরা খুবই শান্ত এবং সহজে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর সংস্পর্শে আসে না। লজ্জাবতী বানর ছোট আকারের। এটি বেঙ্গল স্লো লরিস নামে পরিচিত। স্তন্যপায়ী শ্রেণীর লরিসিডি পরিবারের সদস্য এই বানর বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনের তফসিল-১ অনুসারে সংরক্ষিত প্রাণী।
ভারতীয় উপমহাদেশ এবং ইন্দোচীনে এই বানরদের দেখা পাওয়া যায়। তারা ঘন চিরসবুজ বনে বাস করে। আমাদের বাংলাদেশে চট্টগ্রাাম ও সিলেটের ঘন সবুজ বন, রেমা কালেঙ্গা, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ আরো কিছু জায়গায় এদের দেখা পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে খাবারের অভাবে তারা লোকালয়ে চলে আসে। প্রায়ই বিভিন্ন জায়গা থেকে লজ্জাবতী উদ্ধার করার খবর শোনা যায়। কেউ কেউ আবার বনে ফিরে যেতে পারে, কারো ঠিকানা হয় চিড়িয়াখানার খাঁচায়। দেখতে ভীষণ সুন্দর এই বানরেরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। বন উজাড়করণ ও শিকারের বলি হচ্ছে প্রকৃতির অনন্য জীব বৈচিত্র্যগুলো।
বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নার্গিস সুলতানার নজরে বিষয়টি আসলে তিনি প্রাণীটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।