গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে নরসিংদীর এক বাগান বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি মাদি সাম্বার হরিণকে অবমুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে তাদের অবমুক্ত করা হয়। পার্কে দুটি সাম্বার হরিণ থাকলেও সেগুলো ছিল পুরুষ। উদ্ধার হওয়া সাম্বার হরিণ দুটি মাদী হওয়ায় প্রজণনের আশা জাগাবে সাফারি পার্কে।
সাম্বার হরিণ (বৈজ্ঞানিক নাম Rusa unicolor ) এশিয়া মহাদেশ তথা বাংলাদেশের বৃহত্তম হরিণ প্রজাতি। বাংলাদেশ ছাড়াও এটি ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপাল, মালয়েশিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে পাওয়া যায়। এই হরিণ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের চিরহরিৎ বনাঞ্চলে বাস করে।
বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, ঢাকা’র বন্যপ্রাণি পরিদর্শক নিগার সুলতানা জানান, নরসিংদীর মো. জাফর আহমেদ চৌধুরী ২০০৭ সালে মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে দুটি সাম্বার হরিণ ক্রয় করে তার বাগান বাড়িতে লালন-পালন করে আসছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে হরিণ ও হাতি লালন-পালন বিধিমালায় চিত্রা হরিণ পালনের কথা উল্লেখ থাকলেও সাম্বার হরিণ লালন-পালন করার কথা উল্লেখ নেই। মঙ্গলবার ঢাকার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্লাহ রেজাউল করিমের লিখিত আদেশে এবং বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজল তালুকদারের নির্দেশনায় নরসিংদীর জাফর আহমেদ চৌধুরীর বাগানবাড়ি থেকে সাম্বার হরিণ দুইটি উদ্ধার করা হয়। নিবিড় পরিচর্যা শেষে মঙ্গলবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে হরিণ দুইটি অবমুক্ত করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান জানান, ইতোপূর্বে সাফারি পার্কের ওই হরিণ বেষ্টনীতে দুইটি পুরুষ সাম্বার হরিণ থাকলেও মাদি সাম্বার হরিণ না থাকায় সেখানে সাম্বার হরিণের প্রজনন হওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। এখন সেখানে মাদি সাম্বার যোগ হওয়ায় প্রজনন ও তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সাম্বার হরিণের ৭টি উপপ্রজাতি রয়েছে। পুরুষ হরিণ আকারে স্ত্রী হরিণে চেয়ে বড় হয়। একটি পুরুষ হরিণ উচ্চতায় ৪০-৬৩ ইঞ্চি ও লম্বায় ৫.৩-৮.৯ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। একটি পরিণত বয়সের সাম্বার হরিণের ওজন ৫৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এদের শরীর হলদে বাদামী থেকে গাঢ় বাদামী বর্ণের লোম দ্বারা আবৃত থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই লোম কালচে অথবা পুরোপুরি কালো বর্ণ ধারণ করতে পারে।
তিনি আরোও জানান,পানির উপর সাম্বার হরিণের নির্ভরতা অনেক বেশি। এজন্য এদের আবাসের পাশে জলাধারও থাকতে হয়। এরা ভাল সাঁতারও কাটতে পারে। নিয়মিত পানিতে গোসল করে। গোসলের সময় শুধুমাত্র অ্যান্টলার এবং মুখ কিছুটা ভেসে থাকে। এই হরিণ সারা বছর ধরে প্রজনন করলেও সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি মাস হচ্ছে তাদের অধিকতর পছন্দণীয় সময়। প্রজননকালীন একটি পুরুষ ৬টির অধিক স্ত্রী হরিণের সাথে মিলিত হতে পারে। সাম্বার হরিণের গর্ভকাল ৮-৯ মাস। এরা সাধারণত একটি বাচ্চা প্রসব করে। তবে অনেক সময় দুটি বাচ্চাও প্রসব করতে পারে।