দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কয়েকজন বীরমুক্তিযোদ্ধাসহ পৌর প্যানেল মেয়রকে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে ও ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফখরুল ইসলামকে অপসারণ এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেছেন উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধা ও পৌর এলাকার সহ¯্রাধিক নারী-পুরুষ গণ।
পরে ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান,উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আতাউর রহমান মিল্টন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী সাত দিনের জন্য ওসি ফখরুল ইসলাম কোন কাগজে স্বাক্ষর করবেন না এমন আশ্বাস দিলে মুক্তিযোদ্ধাগণ অবরোধ তুলে নেন।
বৃহস্পতিবার (২২এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে চলে এই বিক্ষোভ। এর আগে আজিজার রহমান নামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার ভাতিজার জমির বিরোধ নিয়ে এক বৈঠকে প্যানেল মেয়র মামুনুর রশিদ চৌধুরী ও বেশ কয়েক জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শারীরিক ভাবে লঞ্চিত করে মোঃ সাহেদ ইসলাম(৩৫)সহ বেশ কয়েক জন। পরে মুক্তিযোদ্ধা আজিজার রহমান বাদি হয়ে ১০জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় প্যানেল মেয়রের লোকজন সাহেদসহ ১০ আসামিকে গ্রেফতারের দাবিতে বুধবার দিনভর ফুলবাড়ী থানায় অবস্থান করেন। সেই সময় থানার ওসি ফখরুল ইসলাম ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামিদের আটকের আশ্বাস দেন।
মুক্তিযোদ্ধা আজিজার রহমান বলেন,সাহেদ ইসলামসহ তার বাহিনীরা লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে আমাকেসহ প্যানেল মেয়রকে লাঞ্চিত করে।বিষয়টি নিয়ে মামলা হলেও অদৃশ্য কারনে ওসির দেওয়া আশ্বাসে কোন কাজ হয়নি। ওসি আসামিদের আটক না করে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অপমানিত করেছেন। তাই আমরা তার অপসারণ দাবি করছি। জানা গেছে,অভিযুক্ত শাহেদ ইসলামের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী-কন্যাকে মারপিটের আভিযোগে একটি মামলা করা হয়,যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন সময় হুমকির আভিযোগে কয়েকেটি সাধারণ ডায়েরী রয়েছে ফুলবাড়ী থানায়।
এদিকে ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফখরুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে,তদন্ত চলছে,তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
রাস্তা অবরোধ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালন কালে মহা সড়কের দুই পার্শে শতশত পণ্যবাহী ট্রাকের যানযট সৃষ্টি হয়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান মো: আতাউর রহমান মিল্টন,উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.রিয়াজ উদ্দিন এবং ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো.আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন,‘ আমারা ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। উনি আপাতত অফিসিয়াল ভাবে কোন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করবেন না এবং আগামী ৭দিনের মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করা হবে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্চিতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামিদের আটকের দ্রুত চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, এবিষয়ে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এখন থেকে ওসি সাহেব আগামী ৭দিনের জন্য অফিসিয়াল দায়িত্বে থাকবেন না। ওসির দ্বায়িত্বে সার্কেল এবং ওসি তদন্ত¡ থাকবেন। পুলিশের পক্ষ থেকে উনারা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিরু সামসুন্নাহার,ইউপি চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ শাহ আব্দুল কুদ্দুস,পৌর প্যানেল মেয়র মামুনুর রশিদ চৌধুরী,সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী,সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ এছার উদ্দিন,বীরমুক্তিযোদ্ধা কাশেম মন্ডলসহ অনেকেই।
এ সময় পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা সবুজ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান,পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মুশফিকুর রহমান রিয়াদ,সরকারি কলেজ শাখার সহ-সভাপতি নাসিম মাহমুদসহ পৌর এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক নারী পুরুষ অংশ গ্রহন করেন।