২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

শিরোনামঃ-
  • হোম
  • দেশজুড়ে
  • রামেকে বৃদ্ধি পেয়েছে চিকিৎসা সেবার মান, ফিরেছে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে




রামেকে বৃদ্ধি পেয়েছে চিকিৎসা সেবার মান, ফিরেছে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী, করেসপন্ডেন্ট।

আপডেট টাইম : জানুয়ারি ১৯ ২০২২, ১৯:৪৫ | 675 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

পরিচিত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল উত্তরাঞ্চলে চিকিৎসা সেবার শেষ আস্থা ও আশ্রয়স্থল। এক সময় হাসপাতালের ভেতর বাহিরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ময়লা, আবর্জনা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ বিরাজ করত। তবে বর্তমানে ভিন্ন চিত্র বিরাজ করছে রামেকজুড়ে। বর্তমানে রামেক হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ফিরেছে। এছাড়াও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলছেন, পূর্বের তুলনায় রামেকে চিকিৎসা সেবার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রামেক হাসপাতাল সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এমনই চিত্রের দেখা যায়। রামেক হাসপাতালের প্রবেশের জন্য একটি দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে, বের হওয়ার জন্য আরেকটি। একই সাথে পায়ে হেটে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার জন্য আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে ঢালাই রাস্তা। আবার প্রবেশ দ্বারের পাশে বছর বছর ধরে জঙ্গল ও ময়লা-আবর্জনার স্তুপ ছিল বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে। সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে লাগানো হয়েছে ফুলের গাছ। ইট দিয়ে বাধানো হয়েছে বড় বড় গাছগুলোর গোড়া। রামেকে প্রবেশের শুরুতেই করা হয়েছে একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজ। অন্যদিকে পূর্বপাশে^ ছাউনি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইক ও কার মাইক্রো রাখার জায়গা।
দেখা গেছে, রামেকের ভেতরে বাশি ও হাতে লাঠি নিয়ে বিভিন্ন যানবাহন নিরসনের দৃশ্যও। এতে রামেকে জটলা ধরে অটোরিক্সা কিংবা সিএনজি দাড়িয়ে থাকছে না। যার ফলে নির্বিঘেœ একের পর এক এ্যাম্বুলেন্সে রোগী আসা যাওয়া করছে মুহুর্তের মধ্যেই। আবার রামেকের ভেতর ও বাইরে দাড়িয়ে থাকতো লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। একে তো স্বজনহারানোর বেদনা, তারপর আবার স্বজনের লাশ পরিবহনের জন্য লাশবাহী গাড়ী চেয়ে বসে ৫ থেকে ১০ গুণ ভাড়া যা রামেকের যুগ যুগ ধরে চলে আসছিলো। তবে বর্তমানে এই চিত্র পাল্টেছে। রামেক হাসপাতাল থেকে লাশ বাণিজ্যের নৈরাজ্যের দিনও শেষ হয়েছে ।
হাসপাতালের ভেতরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের নিচতলাতে খাবার, সুচ-সিরিঞ্জসহ ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে থাকতো। এতে সামান্য নিশ^াস নেওয়ার মতো সুযোগ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এক্ষেত্রে রামেক কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, বিভিন্ন ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা আমরাই করতে পারিনি। তাই অনেক সময় বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনেরা ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা না পেয়ে বাইরে ফেলেন। তবে আগামীতে পরিবেশ আরও সুন্দর পরিচ্ছন্ন করার জন্য ডাস্টবিনসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন রামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।
নগরীর আহম্মদপুর বোসপাড়া এলাকার বাসিন্দা এ্যাড: মো. নিজাম উদ্দিন জানান, তার স্ত্রী রামেকে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসেবার মান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের চাইতে পরিবেশটা অনেক সুন্দর হয়েছে। আবার ডাক্তাররাও সময় দিয়ে রোগী দেখছেন। আবার চুরি-চামারি আটকাতে আইডি কার্ড ছাড়া ঢুকতে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। এই পরিবেশ চলতে থাকলে কখনই ভোগান্তির শিকার হবেনা রোগী ও তার স্বজনরা।
নগরীর ফুদকি পাড়ার বাসিন্দা মো. নাসিম। ভর্তি রয়েছেন ৫নং ওয়ার্ডে। তিনি বলেন, এটা সত্যিই যে সেবার মান আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। রামেকে টেস্টও হচ্ছে অনেক। কিন্তু পরিবেশটা আরও নিট ও ক্লিন করতে হবে।
এদিকে পার্কিং স্লটে দায়িত্বে ছিলেন আশিক নামের এক আনসার সদস্য। রামেকে কাজ করছেন ৬ মাস যাবত। তিনি বলেন, ছ’মাসের মধ্যেই রামেকে আমি অনেক পরিবর্তন দেখেছি। বাইরে নোংরা পরিবেশের পরিবর্তন হয়ে ফুলের বাগান হয়েছে, হয়েছে স্টাফদের জন্য পার্কিং ব্যবস্থা। আবার ইমারজেন্সির গেটের দিকে পানি জমে থাকত, সেটিও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে সেই সমস্যা আপাতত নেই। সবমিলিয়ে রামেকের পরিবেশ আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে।
রামেক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ হাসপাতালে রয়েছে মোট ১২০০ শয্যা। রামেকে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার রোগীর যাতায়াত করেন। তবে এ পরিমাণটি গরমের সময় বেড়ে দাড়ায় প্রায় তিন থেকে চার হাজারে। ওয়ার্ড রয়েছে ৫৭টি। হাসপাতালটিতে চিকিৎসক পদ রয়েছে ২৩৩টি যার মধ্যে শূন্য পদ রয়েছে ৩০টি। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর মোট ৯১১ পদের মধ্যে শূন্য আছে ১৪৬ টি। আগের ৫৫০ শয্যার জনবল দিয়েই ১২০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটির কার্যক্রম চলছে। এতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে রামেক হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী। তিনি ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর রামেকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। যোগদানের পূর্বে ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। রামেকে আসার পর প্রথমেই নজর দেন নোংরা পরিবেশ দূর করার দিকে।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসেই দেখি রামেকের বিভিন্ন জায়গায় অনেক নোংরা ও দুর্গন্ধ। যেটা আমরা অল্প চেষ্টা করলেই তা দূর করতে পারি। ড্রেনগুলো খারাপ ছিল, ম্যানপাওয়ারও কম ছিল। প্রথমদিকে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলাম। তারপর পারসোনালি এখানকার ইমপ্লোয়ারদের মটিভেট করে চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে নিয়ে আসি।
তিনি জানান, এখানে কোন বাগান বা মালির কোন খাত নেই। তারপরও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তার ইন-এক্সিট, যানজট ও সিন্ডিকেট দূরীকরণসহ ডানে-বামে ম্যানেজ করে বাগান করেছি। যাতে মানুষ রামেকে ঢুকতেই যেনো তার মনটা পরিবর্তন হয়ে য়ায়। গেটের ভেতরে বাইরে সেবা ও সচেতনতার জন্য সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। রোগীর তুলনায় জনবল কম। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজি হেলথের মাধ্যমে ১০৬ জন লোক আইটসোর্সিং এর মাধ্যমে নেওয়ার আহব্বান করছি। যাতে হাসপাতালের পরিবেশ ঠিক রাখা যায়। রামেকে শয্যা সমস্যা হচ্ছে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। হাসপাতালে ১০ তলার ফাউন্ডেশন হলেও ৪ তলা পর্যন্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি রোগীর শয্যা বাড়ানো যেতো তবে রোগীর সেবার মান আরও বাড়ানো সম্ভব ছিল। কারণ সবাই ফোন করে একটা বেড চায়।
পরিচালক বলেন, বর্তমানে রামেকে প্রত্যেকটি চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পরিচ্ছন্নকর্মী ও আনসারদের মোডিভেট করা হচ্ছে। আনসারদের প্রাতিষ্ঠানিক তেমন ট্রেনিং নেই। তাদের মাঝে মধ্যেই ব্রিফ করা হয় যেনো তারা তাদের দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে পারে। এসবের ফলও বেশ মিলেছে। চিকিৎসক-নার্সেরা সেবা দিচ্ছেন, পরিচ্ছন্নকর্মীরা তাদের কাজ করছেন আবার আনসাররা মানুষকে মাঝে মাঝে মানুষের সহায়তায় দৌড়ে যাচ্ছেন। এভাবেই ধীরে ধীরে পরিবর্তন সম্ভব বলে জানান পরিচালক।
চিকিৎসা সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে আগে ৫ শতাংশ টেস্টও হতো না। সেখানে আমরা প্যাথলজি ও ইনডোর প্যাথলজি করেছি। এখন ৮০ শতাংশ টেস্ট রামেক হাসপাতালেই হচ্ছে। আশা করছি একমাসের মধ্যেই এখানে শতভাগ প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল টেস্ট সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে পরে থাকা রামেকের সমস্ত যত্রাংশ ঠিকঠাক ও মেরামত করা হয়েছে। যেমন আমি এসেই আরটিপিসিআর ল্যাব মেশিন চালু করিয়েছি। আবার গ্যারেজে পড়ে থাকা উন্নতমানের কোটি টাকার কার্ডিয়াক এ্যাম্বুলেন্সও চালু করেছি। এটি সাধারণ এ্যাম্বুলেন্সের মতোই ভাড়া ধরে সিরিয়াস অবস্থায় এ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে যেতে পারেন। আবার আগে যেখানে ঔষধ পাওয়া যেতো না, সেখানে আমরা অনেক ভালোমানের ঔষধ সরবরাহ দিচ্ছি।
খাবার মানের বিষয়ে পরিচালক ইয়াজদানী বলেন, আসলে মনিটরিং টা হলো সবচেয়ে বড় বিষয়। আগে ঠিকভাবে খাবার মনিটরিং হতো না। কিন্তু বর্তমানে আমি এটি কড়া মনিটরিং করছি। এজন্য একটি কমিটি করে দিয়েছি তারা ভালো খাবার বুঝে নিবে। পাশাপাশি রোগীরা নিচে লাইন ধরে খাবার নেন। এসমস্যা দূর করার জন্য উন্নত ট্রলির ব্যবস্থার চেষ্টা করছি। যাতে প্রতিটি ওয়ার্ডে খাবার ট্রলিতে করে পৌছে দেওয়া যায়।
করোনা ইউনিটের বিষয়ে তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কোন রকম সামাল দিতে পেরেছি। কিন্তু তৃতীয় ঢেউ সামাল দেওয়ার জন্য বেশ প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্রসেসিং সিস্টেমের আওতায় অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত সিলিন্ডারে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে অক্সিজেনের অভাবে রোগী যেনো না মারা যায়।
সবমিলিয়ে রামেক পরিচালক শামীম ইয়াজদানীর আশা, রোগীদের হয়রানি দূর করা, দ্রুত সেবাদান। তাদের সেবার মান উন্নয়ন করা ও সম্মান দেওয়া। বর্তমানে চিকিৎসকেরাও অনেকটায় উদ্যোমী হয়েছেন, অনেক ভালো সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু করোনার কারণে অনেকটায় আমাদের উদ্যোগে ভাটা পড়ছে। মানুষ যখন রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের নাম শুনবে তখন যেনো সম্মানের সাথে নাম টা উচ্চারণ করে। আমরা চাই যে, আমরা ‘ওয়ান অব দ্যা বেস্ট’ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হবো বাংলাদেশের মধ্যে ইনশাল্লাহ।

Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

 

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET