বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি ঃ
নওগাঁর বদলগাছীতে স্কুল শিক্ষিকাকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের ঊদ্যোগে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে সামনে মেইন সড়কে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালন শেষে উপজেলা শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। লাঞ্চিত শিক্ষিকাগণ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ায় তারা প্রতিবাদ করেন। উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জবির উদ্দীন এফ.এফ.এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডি.এম এনামুল হক, দেওয়ান আব্দুর রহিম বাবুল প্রমূখ। বক্তারা বলেন উপজেলার ঝাড়ঘরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত শনিবার ৫ম শ্রেণীর ছাত্র রিয়াদ একটি কাগজের টুকরায় অশ্লিল কথা বার্তা লিখে সহসাথীদের হাতে দেয়। ছাত্রীরা ওই কাগজের টুকরাটি এনে সহকারী শিক্ষিকা শাহানাজ ফেরদৌসকে দেয়। শাহানাজ ফেরদৌস বিষয়টি প্রধান শিক্ষিকা তানজিমা বানুকে জানালে তিনি সহকারী শিক্ষিকা মিতা রাণী কে বিষয়টি দেখার জন্য বলেন। তখন মিতা রাণী ছাত্র রিয়াদকে ডেকে অশ্লিল কথা লেখার অপরাধে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে শাসন করেন। পরে ওই ছাত্র তাৎক্ষনিক ভাবে কাউকে না জানিয়ে স্কুল ত্যাগ করে বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পরে। রিয়াদের অসুস্থতার খবর পেয়ে ওই শিক্ষিকা মিতা রাণী প্রথমে রিয়াদকে দেখতে গেলে গ্রামের কিছু লোকজন শিক্ষিকার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এক পর্যায় তাঁকে লাঞ্ছিত করেন। শিক্ষিকা সেখান থেকে ফিরে প্রধান শিক্ষিকা তানজিনা বানুকে অবহিত করলে সঙ্গে সঙ্গে প্রধান শিক্ষিকা পুনুরায় মিতা রাণী সহ অন্যান্য শিক্ষিক শিক্ষিকারা তাৎক্ষনিক ভাবে রিয়াদ কে দেখতে তার বাড়িতে যায়। সেখানে স্কুলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রয়েল, সেলিম ও আওয়ামীলীগের কোলা ইউপি সভাপতি ফজলুর রহমান এর উপস্থিতে তারা সহ গ্রামের কিছু লোকজন তাদের অশালিন কথাবার্তা বলে এবং শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করার চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধারা আরও বলেন অভিবাবকেরা তাদের ছেলে মেয়েকে শিক্ষার জন্য স্কুলে পাঠান। সেখানে শিক্ষক শিক্ষিকারাও বাবা- মা সমতুল্য অভিভাবক। কোন ছাত্র বা ছাত্রী স্কুলে পড়া লেখা ছেড়ে দুষ্টামি করলে তাদের শাসন করার অধিকার রয়েছে। কারন শিক্ষকেরা মানুষ গড়ার কারিগর। তাদের সম্মান না করলে ভবিষৎতে শিক্ষিত জাতি তৈরী হবে না। পক্ষান্তরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও পরম ¯েœহে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করতে হবে। তাদের বক্তেব্যে আরও জানা যায়, প্রধান শিক্ষিকা তানজিমা বানু উপজেলার কয়াভবানিপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সোনার ও অপর সহকারী শিক্ষিকা মিতা রাণী উপজেলার জগপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রোহল্লাদ এর মেয়ে এবং অপর সহকারী শিক্ষক শরিফ ইকবাল উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসানুল কবির এর ছেলে। বক্তারা আর ও বলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযোদ্ধারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। আর এই স্বাধীন দেশে কোন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা লাঞ্চিত হবে তা সহ্য করা হবে না। তারা প্রশাসনের নিকট এ ঘটনার সঠিক তদন্তসহ প্রতিকার দাবী করেন।
উল্লেখ্য গত শনিবার উক্ত ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় ভাবে সমাধান না হওয়ায় ওই দিন সন্ধ্যায় ছাত্র রিয়াদের বাবা এনামুল হক ও ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তানজিমা বানু বাদী হয়ে বদলগাছী থানায় পাল্টা পাল্টি পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।