শাহজাদপুর(সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি :-
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে শিশু শ্রমের সংখ্যা। পিতা মাতার অবহেলা, চরম অজ্ঞতা আর ভরণপোষনে অক্ষমতাজনিত কারনে শাহজাদপুর উপজেলায় ঝড়ে পড়া শত শত শিশুরা পেটের তাগিদে বিদ্যালয়ে না গিয়ে শিশুশ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে।
নুন আনতে পান্তা ফুরানো অতি হৎদরিদ্র পরিবারে অভিশাপরূপে জন্ম নেওয়া (পিতামাতার ভাষায়) ওইসব ফুটফুটে শিশু কিশোরদেরকে পেটের তাগিদে অল্প বয়স থেকেই জীবন সংগ্রামে পতিত হতে হয়েছে।
যমুনা নদীর তীরবর্তী দুর্গম পল্লী কাশিপুর গ্রামের শরিফুল (৭),মাসুদ (৬) ও মিলনের (৬) শরীরে হাঁতুড়ি দিয়ে ইট ভেঙ্গে খোঁয়া তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি না থাকলেও পেটের তাগিদে ওরা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। পিতা হারিয়ে এই ছোট্ট বয়সেই এসব ভাগ্যবিড়ম্বিত চির অবহেলিত, চির পতিত, চির অপাংক্তেয়,যাদের বিচারের রায় নিরবে নিভৃতে কাঁদে-এসব শিশুদের বইখাতা আর কলমের পরিবর্তে হাতে তুলে নিয়েছে হাঁতুড়ি।
হতদরিদ্র পরিবারের এসব কোমলমতি শিশুরা শুধুই পেটের তাগিদে রোদ্রদাহে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ইট ভাঙ্গার কাজ করছে। এমন করুন চিত্র বড়ই পীড়াদায়ক ও অবিশ্বাস্য হলেও কাজ করলে এমনই এসব শিশুদের পেটে ভাত যায়, আর কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হয়। গরিবের ঘরে জন্ম! এ জন্যই মাত্র ৫/৬ বছর বয়স থেকেই ওদেরকে জীবনযুদ্ধের মতো অমোঘ, নির্মম, নিষ্ঠুর, মর্মাহত, কঠিন বাস্তবতার সন্মুখীন হতে হয়েছে।
ওদের পাশে দাড়ানোর কি কেউ নেই!। শাহজাদপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন কারখানা ও হোটেল, মিষ্টির দোকানগুলোতেও দেখা যাচ্ছে শিশু শ্রমিক। দেশে শিশুদের দিয়ে কাজ করানোর ব্যপারে বিধি নিষেধ থাকলেও ওই কারখানার মালিকরা মানবতার প্রশ্নে এসব শিশুদের কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
শতশত কোমলমতি শিশুদের কাউকে রিক্সা চালাতে,কাউকে কাপড়ের গাইট (বান্ডিল) মাথায় নিয়ে আড়ৎ আড়তে পৌছানোর কাজে ,সুতার বান্ডিল মাথায় নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পৌছে দিতে, বিভিন্ন হোটেলসহ অনেক পেশায়ই কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। হাটের দিন শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে এরূপ অসংখ্য ঝড়ে পড়া শিশু কিশোরদের আনাগোনা ঘটে।‘গাইটটা দ্যান না ভাই,যা দেন (টাকা) দিয়েন তাও গাইটটা দেন’-এমন চিৎকার,করুণ অনুনয় বিনয় করতে দেখা যায় অসংখ্য ঝড়ে পড়া শিশু কিশোরদেরকে শুধুই তাদের পেটের তাগিদে-বাবা মায়ের ভয়ে! দিনভর হাড়ভাঙ্গা মেহনত, খাঁটুনি করে কঙ্কালসার এসব শিশুরা সন্ধ্যায় ৩০/৪০ টাকা আয় করে সেই অর্থ দিয়ে চাউল ও তরকারি কিনে বাড়িতে যায়।
এ ব্যাপারে শিশু শরিফুল, মাসুদ ও মিলনকে লেখাপড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে, তারা জানায়, লেহাপড়া করলি কি প্যাটে ভাত যাইবে। কাম করলি প্যাটে বাত জায় আর কাম না করলি মাও খাইব্যার দেয়না।
শুধু ওইসব শিশুরা নয়, তাদের মতো শাহজাদপুরের অনেকেরই হয়তো বাবা-মাও হয়তো জন্মের পর বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি তাদের দাদা-দাদীদের চরম দারিদ্রতা জনিত কারনে। আর সে জন্যই শুধূমাত্র সচেতনতার অভাবে বোধ হয় তাদের কোমলমতি শিশু কিশোরদের বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে কাজে পাঠাচ্ছে অভাবগ্রস্থ পিতা মাতারা।
শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলেও ওদের মতো চির অবহেলিত, চির পতিত, চির অপাংক্তেয় হৎদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য নাকি লেখাপড়া নয়। আর লেখাপড়া করেই বা কি হবে ? জজ ব্যারিষ্টার তো আর হতে পারবে না, কদিন পরে বাবার মতোই ঘানি টানতে হবে। তাই তাদের পিতা মাতার ভাষ্যমতে, সময় নষ্ট না করে পরিবারের স্বার্থেই তাদের ছোটবেলা থেকে কাজে পাঠানো হচ্ছে।
ফলে ওইসব ঝড়ে পড়া শিশু কিশোরদের বিচারের রায় নিরবে নিভৃতে কাঁদছে। ফলে এ উপজেলায় দিন দিন শত শত কঁচিকাঁচা কোমলমতি শিশু কিশোররা দারিদ্রতা ও বাবা মায়ের চরম অবহেলায় খুব ছোটবেলা থেকেই জীবন সংগ্রামে পতিত হয়ে ঝড়ে পড়লেও দেখার যেন কেউ নেই।