
ছাগলনাইয়ার রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ছাত্র-জনতার সহযোগিতায় আওয়ামী পন্থী তিনজন ইউপি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী। এরআগে ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষে দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রশাসক উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোমেনা বেগম ও ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেনসহ ইউপি সদস্যদের তালা লাগিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটে। ফ্যাসিস্ট সরকার সমর্থিত আওয়ামীলীগ এবং জাসদের পদ পদবীধারী ইউপি সদস্যদের নিয়ে ঘোপন বৈঠকের অভিযোগে টানা দেড় ঘন্টা অবরুদ্ধ রাখা হয়েছিলো বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টিম ও ছাগলনাইয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন কামাল, আবদুর রশীদ সোহেল ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য আছমাউল হুসনাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গতকাল বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদে ঘটনাটি সংগঠিত হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দুপুরে রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ইউপি সদস্যদের নিয়ে ঘোপন বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এসময় ইউনিয়ন পরিষদের আশপাশে কাউকে অবস্থান করতে দেয়া হয়নি। বিষয়টি সন্দেহ জনক হওয়ায় স্থানীয় লোকজন ও ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে ঘোপন বৈঠকের কক্ষটিতে তালা লাগিয়ে দেয়। এসময় ফ্যাসিস্টদের কিছু সহযোগি ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করলে হট্টগোল পরিস্থিতি বিরাজ করে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঘটনার সময় অবরুদ্ধ অবস্থায় রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক মোমেনা বেগম দৈনিক ফেনীকে জানায়, আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব প্রদান করায় আমি প্রায় পরিষদে এসে অর্পিত দায়িত্ব পালন করি। রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যদের মাঝে কারা উপস্থিত এবং কারা অনুপস্থিত এ তথ্যটি নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্দেশ প্রদান করেন। সেই নিরিখে আমি প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে রেজুলেশন করতে বলি। বুধবার সকাল ১১ ঘটিকায় রেজুলেশনটি জমা দেয়ার কথা থাকলেও আমরা পরিষদের নিয়মিত কার্যক্রম শেষ করে বিকেলে এ বিষয়ে মিটিং শুরু করি। এসময় ইউপি সদস্য বৃন্দ পরিষদে আসে। আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই কে বা কাহারা আমরা যে কক্ষে অবস্থান করছি সে কক্ষের দরজায় তালা লাগিয়ে আমাদের অবরুদ্ধ করে। আওয়ামী পন্থী ইউপি সদস্যদের নিয়ে বৈঠকের অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানান, কারা আওয়ামীলীগ পন্থী সেটা আমি জানিনা। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে যেসব ইউপি সদস্য নিয়মিত পরিষদে আসেন তাদের নিয়ে আমরা রেজুলেশন করতে বসেছিলাম।
ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, আমি কোন দলীয় লোকজন নিয়ে মিটিংয়ে বসিনি। সম্প্রতি কয়েক মাস পরপর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের মাঝে কারা উপস্থিত ও কারা অনুপস্থিত এ বিষয়ে তথ্য জানতে চায় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন। সেজন্য রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের যেসব ইউপি সদস্য নিয়মিত আসেন তাদের নিয়ে আমরা মিটিং শুরু করি। পরবর্তীতে আরো কিছু ইউপি সদস্য পরিষদে আসলে আমাদের কক্ষে তালা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ছাত্রজনতার পক্ষে বরিউল হক রবি দৈনিক ফেনীকে জানান, আমারা দুপুরে তথ্য পেয়েছিলাম রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদে জুলাই গনঅভ্যুত্থানে ফেনীর মহিপালে ছাত্রজনতা হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দুইজন আসামিসহ ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর চারজন ইউপি সদস্যকে নিয়ে ঘোপন বৈঠকের প্রস্তুতী চলছে। খবর পেয়ে আমরা ছাত্র-জনতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তথ্যের সত্যতা দেখতে পাই। তিনি জানান, এসময় আমরা বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে ফ্যাসিস্ট সরকারের তিনজন ইউপি সদস্যকে আইনের আওতায় নিয়ে আসি। এসময় ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর অন্য একজন মহিলা ইউপি সদস্য ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় বলেও জানান তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের যে কক্ষ বৈঠক চলে ঐ কক্ষে তালা লাগানোর বিষয়ে রবিউল হক রবি জানান, ফ্যাসিস্টের দোসরদের নিয়ে ঘোপন বৈঠকের খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদে ছাত্র-জনতাসহ হাজারো মানুষের আগমন ঘটে। এসময় কে বা কাহারা তালা লাগিয়েছিলো তা দেখিনি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ছাগলনাইয়া সার্কেল) ওয়ালী উল্যাহ দৈনিক ফেনীকে জানান, আমরা খবর পাই রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কিছু ইউপি সদস্য একত্রিত হয়ে ঘোপন বৈঠক করছে। ঘটনাস্থলে এসে আমরা তিনজনকে গ্রেফতার করি।
Please follow and like us: